শেয়ার বিজ ডেস্ক: চাহিদা বাড়ায় সরবরাহ সংকটের শঙ্কায় সম্প্রতি ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র এবং জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক উত্তোলন হ্রাস অব্যাহত রাখবে, এমন সম্ভাবনায় টানা ছয় দিন ব্রেন্ট তেলের দাম বেড়েই চলেছে। গত তিন বছরের মধ্যে এই প্রথম ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলার ছাড়িয়েছে পণ্যটির দাম। খবর রয়টার্স।
গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্কে লন্ডনের ব্রেন্ট তেলের দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয় ৭৫ ডলার ২০ সেন্টে। ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বরের পর পণ্যটির এ দাম সর্বোচ্চ। দিনশেষে পণ্যটির দর ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলারে স্থির হয়। আগের দিনের তুলনায় এটি দশমিক চার শতাংশ কম। গত ডিসেম্বরে এ বাজারে টানা ছয় দিন দাম বেড়েছিল। এরপর এবারই টানা দর বাড়ল। গত ফেব্রুয়ারির পর পণ্যটির দাম বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিটে (ডব্লিউটিআই) ভবিষ্যৎ সরবরাহের চুক্তিতে মঙ্গলবার প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম পৌঁছায় ৬৮ ডলার ৯৮ সেন্টে, আগের কর্মদিবসের তুলনায় যা ৩৪ সেন্ট বা দশমিক পাঁচ শতাংশ বেশি। লেনদেনের শুরুতে পণ্যটির দাম ৬৯ ডলার ৫৬ সেন্টে উঠেছিল। ২০১৪ সালের ২৮ নভেম্বরের পর এ দর সর্বোচ্চ।
তেলের দরপতন ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরেই ওপেকের নেতৃত্বে প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলো চেষ্টা করে আসছিল উত্তোলন হ্রাস করে সরবরাহ কমাতে। এর ধারাবাহিকতায় দেশগুলো উত্তোলন হ্রাস মেয়াদ আরও বাড়াতে পারে, এমন সম্ভাবনায় জ্বালানি তেলের দর বাড়তে সহযোগিতা করেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হতে পারে এমন শঙ্কা।
২০১৪ সালের শেষ সময় থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতন শুরু হয়। ক্রমাগত দরপতন ঠেকাতে ওপেকভুক্ত দেশগুলো পণ্যটির সম্মিলিত উত্তোলন কমিয়ে আনতে চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, স্বাক্ষরকারী দেশগুলো চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ছয় মাসের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত দৈনিক উৎপাদন ১৮ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের মজুদ পাঁচ বছরের গড়ের সমপর্যায়ে আসবে বলেও আশা করা হয়। রাশিয়াসহ ওপেকবহির্ভূত ১০টি দেশ এ চুক্তি মেনে পণ্যটির উত্তোলন কমাতে রাজি হয়।
তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চুক্তির শর্ত বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে এর মেয়াদ আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় গত ৩০ নভেম্বর ওপেক সভায় আবারও নয় মাসের জন্য অর্থাৎ ২০১৮ সালের শেষ সময় পর্যন্ত উত্তোলন হ্রাস চুক্তি মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এদিকে ইরানের সঙ্গে ছয় পশ্চিমা রাষ্ট্রের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে পরিবর্তন চায় যুক্তরাষ্ট্র। সংশোধন না হলে তা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১২ মে বৈঠকে চুক্তি থেকে ওয়াশিংটনের বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে পণ্যটির বাজারে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ শঙ্কা থেকে পণ্যটির দাম বেড়ে চলেছে।