Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:37 pm

ঋণখেলাপিদের শাস্তি না হলে সংকটে পড়বে আর্থিক খাত

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি। এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে। এতে একাধিক ব্যক্তি জড়িত। রাজনৈতিক প্রশ্রয় ছাড়া এটা অসম্ভব। যখন কোনো ব্যক্তি দুর্নীতি করে পার পেয়ে যায়, তখন দুর্নীতিকারীরা আরও সাহস পায়। তারা একের পর এক দুর্নীতি করে রাজনৈতিক আশ্রয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। এতে আর্থিক খাত সমস্যায় পড়ে যায়। এর প্রভাব পরে মানি মার্কেট ও পুঁজিবাজারে। এসব ঋণখেলাপি ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় না আনতে পারলে আর্থিক খাত আরও সংকটে পড়বে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ই-সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান (অব.) ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ঢাকা চেম্বারের (অব.) সাবেক সভাপতি মো. সবুর খান।

ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন,  পুঁজিবাজার খুব বেশি ভালো অবস্থায় নেই। দেশে উন্নয়নের যে একটি ধারাবাহিকতা আছে সেটি সব খাতে  পৌঁছালেও পুঁজিবাজার নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে এখনও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। শুধু বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জকে (বিএসইসি) আন্তর্জাতিক মানে নেওয়া, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) ডি মিউচুয়ালাইজেশন করা ছাড়া। ভালো মানের কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসছে না। শুধু দুর্বল কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসে। এরা বাজারে এসেই অতি মূল্যায়িত হয়। কিন্তু পরে ধীরে ধীরে পতনের দিকে যায়।

তিনি আরও বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রকদেরও জবাবদিহিতায় আনতে হবে। যদি না আনা হয় সেক্ষেত্রে জনগণের টাকা নিরাপদে রাখা যাবে না। জবাবদিহিতায় আনা মানেই ইস্যুয়ার, ইস্যু ম্যানেজার এবং মার্কেট মেকারসহ সবাই জবাবদিহিতায় আসবে।

তিনি আরও বলেন, আগে আমরা বলতাম, ৩৫ লাখ বিনিয়োগকারী ডে ট্রেডার। কিন্তু এখন দেখি করপোরেট কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ডে ট্রেডার। বাজারে  যেটুকু ম্যানুপুলেট বা ওঠানামা হচ্ছে তা শুধু ব্যাংক, আর্থিক খাতের কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজের কারণে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নততর হতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে কিছু কিছু জিনিস বিবেচনায় আনতে হবে।

এই সরকারের আমলে মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ে বেশি আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে এবং ব্যাংকিং খাতে একটির পর একটি সমস্যা তৈরি হচ্ছে এই মন্তব্যের জবাবে মো. সবুর খান বলেন, সিআইবি যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হতো তাহলে দেশ অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতো। আমি মনে করি, সিআইবি বাস্তবায়নের কারণে একটি জায়গায় ব্যাংক সুরক্ষা পাচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার আগে সে দেখতে পারে প্রতিষ্ঠানটির অন্য কোনো জায়গায় খেলাপি আছে কি না। এখন সমস্যা হচ্ছে, পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি কিন্তু একদিনে হয়নি। এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে। এতে একাধিক ব্যক্তি জড়িত। রাজনৈতিক প্রশ্রয় ছাড়া এটা অসম্ভব। যখন কোনো ব্যক্তি দুর্নীতি করে পার পেয়ে যায়, তখন তিনি মনে করেন আমাকে কে ধরবে? তখন দুর্নীতিকারীরা আরও সাহস পায়। তারা একের পর এক দুর্নীতি করে রাজনৈতিক আশ্রয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। এতে আর্থিক খাত সমস্যায় পড়ে যায়। এর প্রভাব পরে মানি মার্কেট ও পুঁজিবাজারে। এসব দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় না আনতে পারলে আর্থিক খাত সংকটে পড়তে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, যারা ৫০ কোটি টাকা নিয়ে ঋণখেলাপি হয়ে কোর্টে স্টে অর্ডার পাচ্ছে, এর মানে তারা রাজনৈতিকভাবে সমর্থন পাচ্ছে। আর অন্যদিকে একটি সামান্য মোবাইল ফোন চুরির কারণে পার পাচ্ছে না কেউ কেউ। অথচ ৫০ কোটি টাকা ঋণখেলাপিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। এই সিস্টেমের জন্য দায়ী অর্থমন্ত্রী। শুধু অর্থমন্ত্রী দায়ী তা না, এর সঙ্গে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরও অনেকেই জড়িত।