Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 8:52 pm

ঋণখেলাপির মামলায় তিন ব্যাংকার জেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: আলোচিত ঋণখেলাপি হারুন উর রশিদের নামে ঋণ দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তিন ব্যাংকারকে জেলে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। অভিযোগ রয়েছে, ইস্পাতের কাঁচামাল কেনার নামে লোকাল এলসি খুলে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখার ৫৯ কোটি ২৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। গতকাল ভারপ্রাপ্ত মহানগর দায়রা জজ ও অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের
মেয়াদ শেষে শুনানির পর তিন ব্যাংকারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী হারুন উর রশিদ স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির জন্য আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখায় ৫৯ কোটি ২৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকার এলসি খোলেন। পরে তিনি এ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে মামলা করেন তৎকালীন আগ্রাবাদ শাখায় কর্মরত তিন ব্যাংকারের বিরুদ্ধে। এ তিনজনকে গতকাল জেলে পাঠিয়েছেন আদালত। চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত মহানগর দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ শেষে শুনানির পর তিন ব্যাংকারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তারা হলেন বর্তমানে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার এসএভিপি ও ম্যানেজার মো. শামসুল আলম, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের জুবিলি রোড শাখার এসএভিপি আমিনুর রশীদ ও খাতুনগঞ্জ শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার সোহেল রানা।
দুদকের পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু জানান, হারুন উর রশিদ নামের এক ব্যবসায়ীর নামে লৌহজাত কাঁচামাল কেনার জন্য লোকাল এলসি খোলা হয়। শহীদুল্লার কাছ থেকে এসব কাঁচামাল কেনার কথা ছিল। কাঁচামাল বিক্রির জন্য মজুদ আছে কি না জরিপ করার জন্য ওই তিন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়। তারা মিথ্যা প্রতিবেদন দেন। গত মার্চে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ঘটনায় ৪৩ কোটি ২৭ লাখ ৫৪ হাজার এবং ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে। এরপর আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে শুনানি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ প্রসঙ্গে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জোনাল হেড মোহাম্মদ আজম শেয়ার বিজকে বলেন, চিটাগং ইস্পাতের হারুন সাহেব আমাদের একজন ঋণখেলাপি গ্রাহক, যিনি ২০০৭ সালে একটি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির জন্য এলসি করেন। পরে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করে উল্টো আমাদের তখনকার জুনিয়র স্টাফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে দুদকের কাছে। এটা পুরোপুরি একটা মিথ্যা মামলা। আর এমন ঘটনা হলে তো তারা পরে পদোন্নতি পেয়ে ম্যানেজার হতেন না। এছাড়া জামিনের মেয়াদ ছিল ২৮ দিন। অথচ এক দিন আগেই তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এরকম হলে তো নতুন প্রজš§ আর ব্যাংকে চাকরি করবে না।
উল্লেখ্য, আলোচিত ঋণখেলাপি হারুন উর রশিদের কাছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখার পাওনা প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। এ পাওনার জন্য ব্যাংকটি অর্থঋণ আদালতে মামলা করে এবং আদালত বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে পাওনা আদায়ের জন্য রায় প্রদান করেন। রায়ের বিরুদ্ধে হারুন উর রশিদ উচ্চ আদালতে আপিল করেন। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকে তার মালিকানাধীন রুবাইয়া ভেজিটেবল অয়েলের কাছে ১২৯ কোটি ৪৫ লাখ এবং চিটাগং ইস্পাতের কাছে ১৩০ কোটি ২২ লাখ টাকা পাওনা আছে, যা ঋণখেলাপি। শুধু তা-ই নয়, তার বিরুদ্ধে একাধিক ব্যক্তি ও পাওনাদারের মামলা চলমান আছে।