নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপি হওয়ায় চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত পোশাক খাতের সাদ মুসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহসিনকে দেশত্যাগ নিষেধাজ্ঞা দেয়। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা ব্যাংকে খেলাপি মামলার শুনানিতে এ আদেশ দেন।
জানা যায়, মোহাম্মদ মহসিন রপ্তানির জন্য একাধিকবার সিআইপি হন। এরপর অনিয়ন্ত্রিত ও মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ, ফান্ড ব্যবস্থাপনার অভাব, করপোরেট সংস্কৃতি চর্চার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ডুবেছে সাদ মুসার ব্যবসা। এর মধ্যে এ গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান খেলাপি হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে। গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এম এ রহমান ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ এবার খেলাপি হয়েছে ঢাকা ব্যাংকে । ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৭৪ কোটি টাকা।
ঢাকা ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ মহসিন এম এ রহমান ডাইংয়ের নামে ঢাকা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ নেন। প্রথম দিকে নিয়মিত ঋণ থাকলেও পরে অনিয়মিত ঋণে পরিণত হয়। একপর্যায়ে খেলাপি পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৪ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৬০৩ টাকায়। এ পাওনা পরিশোধে গত এক বছরে বেশ কয়েকবার তাগাদা দিলেও প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা একাধিকবার ব্যর্থ হন। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খেলাপি পাওনা আদায়ে ঋণের বিপরীতে বায়েজিদ থানার কুলগাঁও মৌজায় এক দশমিক ৬৮ একর জমি, কারখানা ও স্থাপনাসহ বন্ধকীতে থাকা সম্পত্তি নিলামে বিক্রয়ে উদ্যোগ নিয়েছিল।
অপরদিকে পূবালী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এম এ রহমান ডাইং পূবালী ব্যাংকের সিডিএ এভিনিউ শাখা থেকে ঋণ নেয়। প্রথম দিকে নিয়মিত ঋণ থাকলেও পরে অনিয়মিত ঋণে পরিণত হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭১ কোটি ৭৮ লাখ ২৫ লাখ ১৯৬ টাকা। এ পাওনা পরিশোধে ব্যর্থতায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মামলা করে।
সাদ মুসা গ্রুপ ও ব্যাংক-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে গ্রুপটির কাছে ন্যাশনাল ব্যাংকের পাওনা ৭৮০ কোটি টাকা, স্ট্যার্ডাড ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংকের ৪১৮ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৩৭৮ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্টে ২৪৬ কোটি টাকা, সাইথইস্ট ব্যাংকে ৫২০ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংকে ৩৭১ কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংকে ১১০ কোটি টাকা, এরআরবিসি ব্যাংকে ১৭৫ কোটি টাকা, উত্তরা ব্যাংকে ৭৮ কোটি টাকা, উত্তরা ফিন্যান্সে ৮০ কোটি টাকা ও বিডি ফিন্যান্সে ৪৯ কোটি টাকা। এছাড়া ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশনেও বড় অঙ্কের পাওনা বকেয়া রয়েছে।
মোহাম্মদ মহসিনের নামে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার, কর ফাঁকি ও আয়কর রিটার্নে বিদেশে বিনিয়োগের তথ্য গোপনের অভিযোগও ছিল।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক আইন অনুসারে সাদ মুসা গ্রুপের এম এ রহমান ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড খেলাপি হয়েছে। তাদের কাছে খেলাপি পাওনার পরিমাণ ৭৪ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ খেলাপি। তাই এ মামলায় আদালত দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেয়।
ঋণ খেলাপি বিষয়ে মোহাম্মদ মহসিনের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। যদিও সম্প্রতি প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি শেয়ার বিজকে বলেছিলেন, ‘এখন অনেক চাপে আছি। নানা জটিলতার মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করছি। চেষ্টা করছি ব্যাংকগুলোর ঋণ পরিশোধে। এখন শ্রমিকদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।