Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:34 pm

ঋণপ্রবাহ বাড়লেও কমেছে আমানত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোর মোট আমানত বেড়েছে ১০ দশমিক ছয় শতাংশ আর ঋণ বেড়েছে ১৮ দশমিক এক শতাংশ। ২০১৬ সালে আমানত বেড়েছিল ১৩ দশমিক এক শতাংশ, ২০১৫ সালেও যা একই ছিল। আর ২০১৬ সালে ঋণ বেড়েছিল ১৫ দশমিক তিন শতাংশ, যা ২০১৫ সালে ছিল ১২ দশমিক ছয় শতাংশ। এ হিসাবে দেখা যায়, গত তিন বছরে ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ কমলেও বেড়েছে ঋণপ্রবাহের হার। অর্থাৎ ঋণের প্রবৃদ্ধি যে হারে বাড়ছে সে হারে বাড়ছে না আমানত। ফলে তারল্য সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে।
এমন তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে। গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএমের মিলনায়তনে ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক এক কর্মশালায় ‘ট্রেজারি অপারেশন অব ব্যাংক ২০১৭’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, ব্যাংক খাতের জন্য ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের ট্রেজারি ব্যবস্থাপনাকে আরও আপডেট করছি। তিনি বলেন, বর্তমানে ডলারের দাম একটু বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নজরে রাখছে যেন টাকার বিপরীতে ডলারের দাম আর না বাড়ে।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ওই কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ, চেয়ারের অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া এবং প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান।
কর্মশালায় মূল গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অসতর্কতা ও সঠিকভাবে তথ্য যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেওয়ায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৩ সালে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার ছিল আট দশমিক ৯৩ শতাংশ। চার বছরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসাইন প্রধানিয়া বলেন, ট্রেজারি ব্যবস্থাপনার ভুল নীতির কারণে ২০১৭ সালে কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। তাই ট্রেজারি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক খাত এখন খারাপ যাচ্ছে, এটা ঠিক। কিন্তু দেখতে হবে এখন একই সঙ্গে অনেক মেগা প্রকল্প চলছে। অনেক মেগা প্রকল্প একসঙ্গে চললে এমনটা হতে পারে। ব্যাংকের তারল্য সংকট স্থায়ী কোনো সমস্যা নয়।
তিনি আরও বলেন, অফশোর ব্যাংকিংকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বর্তমানে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ অর্থ ঋণ দেওয়া হয়েছে, যা দেশের ব্যাংকগুলোর মোট তারল্যের চেয়ে বেশি। অফশোর ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম খতিয়ে দেখা দরকার। অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী হচ্ছে না।
প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে ট্রেজারি স্ট্রাকচার পরিপূর্ণ নয়, কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এগুলো দূর করতে হবে। ট্রেজারির সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত আছে। তাই ট্রেজারি ব্যবস্থাপনায় দক্ষ জনবল নিয়োজিত করতে হবে।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিকভাবে ট্রেজারির অবস্থা আমাদের জানতে হবে। নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ব্যাংকগুলো নিজেদের সক্ষমতার বাইরে এলসি খুলছে। এটা ঠিক নয়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ব্যাংককে বিপদে ফেলতে পারে। তিনি বলেন, ব্যাংকে তারল্য সংকট আছে, কিন্তু এই সংকট সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং সেক্টরের নয়। কিছু ব্যাংকে সংকট থাকতে পারে, কিন্তু সব ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই।
অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, আমাদের অবশ্যই বন্ড মার্কেটের উন্নতি করতে হবে। আর এটি সরকারকেই করতে হবে। ট্রেজারি বন্ড চালু করতে হবে। টিকিট সাইজ ছোট করতে হবে। এখন সময় এসেছে ১০ হাজার টাকার বন্ড চালু করার। ১০ হাজার টাকার ট্রেজারি বন্ড মার্কেটে ছাড়লে তারল্য বাড়বে।