Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 12:44 am

ঋণাত্মক ইক্যুইটির তথ্য নেই বিএসইসিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঋণাত্মক ইক্যুইটির কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও এ ধরনের হিসাবধারীদের কোনো তথ্য নেই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি)। যদিও কয়েক দফায় ঋণাত্মক ইক্যুইটি হিসেবে লেনদেন করার সুযোগ দিয়েছে সংস্থাটি। সবশেষ আরও ছয় মাস অর্থাৎ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি, যা বাজারের জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ঋণাত্মক ইক্যুইটির পরিমাণ কিংবা এ সম্পর্কিত পোর্টফোলিও সংখ্যার কোনো তথ্য বিএসইসির কাছে নেই। এ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের কাছে কখনও বিএসইসি জানতেও চায়নি বলে জানা গেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এ তথ্য বিএসইসির কাছে থাকাটা জরুরি বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান এ প্রসঙ্গে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কমিশন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ঋণাত্মক ইক্যুইটি সম্পর্কিত তথ্য জানার উদ্যোগ  নেবে। শিগগিরই এ ধরনের হিসাবধারীদের তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হবে। তবে অনেক মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো নিজেদের স্বার্থেই যেভাবে হোক ঋণাত্মক ইক্যুইটি সমন্বয় করে ফেলেছে’ বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) ২০১৫ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, ঋণাত্মক ইক্যুইটির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান বাজারের অবস্থা একটু ভালো হওয়ায় এর পরিমাণ কিছুটা হলেও কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক পরিচালক বলেন, ‘একটি ইতিবাচক বাজারের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে ঋণাত্মক ইক্যুইটির তথ্য থাকা দরকার।’

মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর ৩(৫) ধারা অনুসারে নেগেটিভ ইক্যুইটির ঋণাত্মক মূলধনধারী হিসাবের একজন গ্রাহক নিজে শেয়ার কেনাবেচা করতে পারেন না। কেবল ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের হিসাবে শেয়ার বিক্রি করে তার ঋণ সমন্বয় করতে পারে। ২০১০ সালের পর বাজারে মন্দাবস্থা বিবেচনায় বিএসইসি আলোচিত আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাটির কার্যকারিতা কয়েক দফা স্থগিত করে। সর্বশেষ স্থগিতাদেশের মেয়াদ গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। স্থগিতাদেশের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। গত বৃহস্পতিবার বিএসইসির ৫৯৭তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পাঠানো প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে বিএসইসি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) অনুরোধে ডিএসই বিএসইসির কাছে প্রস্তাবটি পাঠিয়েছিল।

ঋণাত্মক ইক্যুইটি হিসাবে লেনদেন আরও ছয় মাস শেয়ার কেনাবেচা করার সুযোগ দেওয়ায় বাজারে লেনদেন বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। এ সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারে নতুন হাতছানি বলে মনে করছেন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা।

বাজারে টানা দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ নিয়ে টাকা খাটিয়ে লোকসানে পড়া বিনিয়োগকারীদের দাবি ও স্টক এক্সচেঞ্জের অনুরোধে ২০১৩ সালের এপ্রিলে মার্জিন রুলসের সংশ্লিষ্ট ধারাটির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। এরপর দুইবার স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রতিবারই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আইন শিথিলের ওই নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু গত বছর এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো অনুরোধ না জানানোয় বিএসইসি এ বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা জারি করেনি। ফলে স্থগিতাদেশের মেয়াদ গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, মার্জিন ঋণ হচ্ছে বিশেষ ধরনের ঋণ সুবিধা। শেয়ার কেনার জন্য ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক গ্রাহককে এ ঋণ দিয়ে থাকে। বিএসইসি প্রণীত মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর আওতায় এ ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

২০১০ সালের পর থেকে টানা দরপতনে অসংখ্য মার্জিন অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগকারীর মূলধন ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। ওইসব অ্যাকাউন্টে থাকা শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম এমন জায়গায় নেমে এসেছে, বিনিয়োগকারীর নিজস্ব মূলধন বলতে কিছু নেই। উল্টো গ্রাহকের কাছে টাকা পাবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। আইন অনুসারে এমন অ্যাকাউন্টে লেনদেন নিষিদ্ধ।

১৯৯৯ সালের মার্জিন রুলসের ৩(৫) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো বিনিয়োগকারীর ডেবিট ব্যালেন্স ১৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান তার কাছে নতুন করে মার্জিন চাইবে। এই মার্জিনের পরিমাণ এমন হবে, যাতে তার ডেবিট ব্যালেন্স ১৫০ শতাংশের ওপরে থাকে। নোটিস দেওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে পর্যাপ্ত মার্জিন জমা দেওয়া না হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে নতুন কোনো লেনদেনের অনুমতি দিতে পারবে না ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান।

বাজারে টানা দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ নিয়ে টাকা খাটিয়ে লোকসানে পড়া বিনিয়োগকারীদের দাবি ও স্টক এক্সচেঞ্জের অনুরোধে ২০১৩ সালের এপ্রিলে মার্জিন রুলসের সংশ্লিষ্ট ধারাটির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। এরপর দুইবার স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রতিবারই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আইন শিথিলের ওই নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু গত বছর এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো অনুরোধ না জানানোয় বিএসইসি এ বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা জারি করেনি। ফলে স্থগিতাদেশের মেয়াদ গত ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে কথা বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, এর আগে যতবার মার্জিন রুলসের সংশ্লিষ্ট ধারাটি স্থগিত করা হয়েছে, ততবারই সেটি স্টক এক্সচেঞ্জের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর সর্বশেষ স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এতদিন স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো অনুরোধ কেউ করেনি। তাই বিএসইসিও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কিছু করেনি। স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তাব পাওয়ায় বিএসইসি বিষয়টি বিবেচনা করেছে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, সর্বপ্রথম ২০১৩ সালের ৪ মার্চ ডিএসইর পক্ষ থেকে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে মাইনাসে থাকা পোর্টফলিও পুনর্বিন্যাস এবং ১৯৯৯ সালের মার্জিন রুলসের ৩(৫) ধারা স্থগিত করার দাবি জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৯ এপ্রিল বিএসইসির বিনিয়োগকারীদের জন্য মার্জিন রুলস ১৯৯৯-এর ৩(৫)-এর কার্যকারিতা স্থগিত করে। এরপর আরও কয়েক দফা এ ধারাটির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়।