সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস অর্থবছর শুরু করে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি নিয়ে। তবে চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম তিন মাস শেষে রাজস্ব আয়ের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দুই দশমিক ৭৫ শতাংশে পৌঁছেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ জুলাইয়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় চার হাজার ৯৮০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। কিন্তু কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আমদানি-রপ্তানি সøথ হয়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার ৬৮৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা কম রাজস্ব আয় করে, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম। আর বিগত বছর থেকে আদায়ের প্রবৃদ্ধির তুলনা করলে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। যদিও ২০১৯-২০ অর্থবছরে একই সময়ে অর্থাৎ জুলাইয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল চার দশমিক ৭৮ শতাংশ।
আগস্টেও প্রবৃদ্ধির হার ভালো ছিল না প্রতিষ্ঠানটির। লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ পিছিয়ে ছিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। আগস্টে পাঁচ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও প্রতিষ্ঠানটি আয় করে মাত্র তিন হাজার ২৬৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে দুই হাজার ৩৪ কোটি ১১ লাখ টাকা কম। তবে আগের অর্থবছরে একই সময়েও প্রবৃদ্ধির হার ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ ঋণাত্মক ছিল।
এরপর সেপ্টেম্বরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও ক্রমবৃদ্ধি প্রবৃদ্ধির হারে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি থেকে বেরিয়ে আসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৪ হাজার ৭৩০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বিপরীতে চট্টগ্রাম কাস্টম রাজস্ব আয় করে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। তবে গত অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করলে প্রবৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় দুই দশমিক ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস রাজস্ব আয় করেছিল ১০ হাজার ৯৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। যদিও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে এই দুই অর্থবছর থেকে বেশি রাজস্ব আয় করেছিল কাস্টম হাউস। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৪৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এদিকে শুধু সেপ্টেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ৪৫০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। বিপরীতে কাস্টম হাউস রাজস্ব আয় করতে পেরেছে তিন হাজার ৮১৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৪ দশমিক ২৬ শতাংশ কম।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস চলতি অর্থছবছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করেছে ৬৫ হাজার ৪৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫৮ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও চট্টগ্রাম কাস্টম রাজস্ব আয় করে ৪১ হাজার ৮৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৮ দশমিক ২১ শতাংশ কম আদায় হয়েছিল। কারণ কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অর্থবছরের শেষের মাসগুলোতে আশানুরূপ রাজস্ব আদায় হয়নি শুল্ক স্টেশনটির।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু করোনাভাইরাসের সৃষ্ট কভিড-১৯ এর প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। তাতে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ কমে যায়। দেশের শুল্কস্টেশনগুলো বৃহৎ অঙ্কের রাজস্ব হারায়। চলতি অর্থবছরের শুরুতেও একই অবস্থা ছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। এছাড়া রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে প্রবৃদ্ধির হার আগের তুলনায় অনেক উন্নতি হয়েছে।