নজরুল ইসলাম: ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ৬১ লাখ ২০ হাজার ১১ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের সুদ হিসেবে পরিশোধের জন্য সুদ খাতের চেক ইস্যু করে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বাহক চেক দিয়ে ও নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়। মোট ১১টি চেকের মাধ্যমে টাকাগুলো আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এমডিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। উপপরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ বাদী হয়ে গতকাল মামলাটি দায়ের করেছেন।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ৬১ লাখ ২০ হাজার ১১ টাকা নগদ উত্তোলন করা হয়। এসব টাকা আত্মসাৎ করে স্থানান্তর, পাচার, প্লেসমেন্ট ও লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে অপরাধ করেছেন আসামিরা। তারা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
আসামিরা হলেন ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্তনু সাহা, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজমুন নাহার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার আহসানুল ইসলাম এবং সিনিয়র ম্যানেজার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল হক চৌধুরী।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ফান্ড কালেকশনের কমিশন ও ডিপোজিট কালেকশনের কমিশন বাবদ এসব টাকা বিভিন্ন ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ এসব টাকা দেয়া হয়েছে মর্মে দেখানো হয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালে এসব ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের জন্য কোনো ফান্ড বা ডিপোজিট আসেনি। তাছাড়া এই দুটি খাতে অর্থ দেয়ার জন্য পৃথক হেড রয়েছে, সে হেড থেকেও কোনো অর্থ দেয়া হয়নি।
এজাহারে বলা হয়েছে, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ২০১৯ সালের ২৭ জুনের এক ভাউচারের (নম্বর ২০১৯১১১৮) বর্ণনা অনুযায়ী ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড বরাবর চেক ইস্যু করার কথা। কিন্তু চেকটি বাহক চেক হিসেবে মো. কাশেমের নামে ইস্যু করা হয়। নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে ৭ লাখ টাকা টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
একই বছর ৯ এপ্রিলের এক ভাউচারের (নম্বর ২০১৯০৬৪৯) বর্ণনা অনুযায়ী, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক বরাবর একটি চেকটি ইস্যু করার কথা। চেকটি বাহক চেক হিসাবে মো. সোলায়মানের নামে ইস্যু করা হয়েছে। নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
একই বছর ৩১ জানুয়ারির এক ভাউচারের (নম্বর ২০১৯০১৮৪) বর্ণনা অনুযায়ী, দুটি চেক সংশ্লিষ্ট প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড বরাবর ইস্যু করার কথা। কিন্তু চেক দুটি বাহক চেক হিসেবে ইস্যু করা হয়। ১ লাখ টাকা নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।
২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বরের এক ভাউচারে (নম্বর ২০১৮২৪৬২) বর্ণনা অনুযায়ী, একটি চেক সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড বরাবর ইস্যু করার কথা। কিন্তু চেকটি নগদ চেক হিসেবে রুমন মিয়ার নামে ইস্যু করা হয়। নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৬ লাখ টাকা নগদ চেক ইস্যু করতে পারে না। তা সত্ত্বেও বাহক চেকের মাধ্যমে এই চেকটি দেয়া হয়েছে।
একই বছর ২৬ নভেম্বরের এক ভাউচারের (নম্বর ২০১৮২৩১৮) বর্ণনা অনুযায়ী, একটি চেক মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড বরাবর ইস্যু করার কথা। কিন্তু চেকটি বাহক চেক হিসেবে মুজাহিদুর রহমানের নামে ইস্যু করা হয়। ৫ লাখ ৫ হাজার টাকা নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।
একই বছর ১৮ নভেম্বরের এক ভাউচারের (নম্বর ২০১৮২৩১৭) বর্ণনা অনুযায়ী, একটি চেক মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড বরাবর ইস্যু করার কথা। কিন্তু চেকটি নগদ চেক হিসাবে মো. সোহেলের নামে ইস্যু করা হয়। ৭৫ হাজার টাকা নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।
২০১৭ সালে ২৭ জুলাইয়ের এক ভাউচারের (নম্বর ২০১৭১৬৩৯) তথ্য অনুযায়ী, চারটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকের চারটি নগদ চেক বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ইস্যু করা হয়। এতে ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ১১ টাকা নগদ উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।