ঋণ ও আমানত সুদ হারের ব্যবধান ঊর্ধ্বমুখী

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান বেড়ে চলছে। গত আগস্টে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান বা স্পেড বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশে, যা গত ১৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূলত গত জুলাই থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ানোর কারণে এ ব্যবধান বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্টে ব্যাংকগুলো গড়ে ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে। বিপরীতে ঋণ বিতরণ করেছে গড়ে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ সুদে। এতে ব্যাংক খাতের ঋণ ও আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশে। এর আগে গত জুলাইয়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের ব্যবধান ছিল ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। ব্যাংকগুলো গড়ে ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ সুদে আমানত নিয়ে ঋণ বিতরণ করেছে গড়ে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে। অর্থাৎ প্রতি মাসে আমানত ও ঋণের সুদহার বাড়ছে। যে কারণে ঋণ ও আমানতের ব্যবধানও বাড়ছে। গত আগস্টে ঋণ ও আমানতের যে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে, তা গত ১৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ঋণ ও আমানতের ব্যবধান ছিল ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ঋণ ও আমানতের ব্যবধান বাড়াটা ব্যাংক খাতের জন্য ভালো। এক সময় স্প্রেডটা ৪ শতাংশ ছিল, তা এখন অনেক কমে গেছে। স্প্রেড কমা ব্যাংক খাতের জন্য ভালো দিক নয়। ব্যাংকের টেকসই নির্ভর করে মার্জিনের ওপর। কোর ব্যবসা কিন্তু টাকা দেয়া ও টাকা নেয়া। মার্জিন কমতে থাকলে সেটা টেকসই হয় না। স্প্রেড এখন ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকবে, কারণ জুলাই থেকে নতুন সুদহার চালু হয়েছে। একটা ব্যাংকের টেকসই অবস্থান বুঝাতে হলে ভালো মার্জিন থাকা দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ স্প্রেডে ঋণ বিতরণ করতে পারে। চলতি বছরের আগস্টে দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত ও ঋণের ব্যবধান বা স্প্রেড ছিল বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের আমানত ও ঋণের গড় ব্যবধান ছিল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে দুটি ব্যাংকের স্প্রেড ঋণাত্মক ছিল। আগস্টে বেসিক ব্যাংকের স্প্রেড ঋণাত্মক ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ওই মাসে ব্যাংকের আমানতের গড় ছিল ৬ দশমিক ২০ শতাংশ আর ঋণ বিতরণের গড় ছিল ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। আমানতের চেয়ে ঋণে কম সুদহার হওয়ায় স্প্রেড ঋণাত্মক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) স্প্রেড ঋণাত্মক ছিল প্রায় ১ শতাংশ। আগস্টে ব্যাংকটির আমানতের গড় সুদহার ছিল ৬ দশমকি ৩৭ শতাংশ আর ঋণের গড় সুদহার ছিল ৫ দশমকি ৪০ শতাংশ।

আগস্টে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণের গড় ব্যবধান ছিল ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর গড় ব্যবধান ছিল ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণের স্প্রেড বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল এ খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণের গড় সুদহার বেশি ছিল। আমানতের গড় সুদহার ছিল কম। আগস্টে এ ব্যাংকগুলোর আমানতের গড়

 সুদহার ছিল ১ দশমিক ২৯ শতাংশ আর ঋণে ছিল ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ মাসে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের আমানত ও ঋণের স্প্রেড ঋণাত্মক ছিল ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ব্যাংকটি গড়ে আমানত নিয়েছে ২ দশমিক ৫৯ শতাংশে আর গড় ঋণ বিতরণ করেছে শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশে।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড হয়েছে ৩ দশমিক ৩১ শতাংশীয় পয়েন্ট। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টে দেশের বেসরকারি ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ০৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। এ সময়ে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে তিনটি ব্যাংকের স্প্রেড ঋণাত্মক দাঁড়িয়েছে; আগস্টে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ঋণাত্মক ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, পদ্মা ব্যাংকের ঋণাত্মক ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঋণাত্মক ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেন, সাধারণভাবে খেলাপি ঋণ অনেক বাড়লে স্প্রেড ঋণাত্মক হয়। কেননা খেলাপি হওয়া একটি অংশের বিপরীতে আয় দেখানো যায় না। সুদ খাত হলো ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস। সেখান থেকে আয় না হলে ব্যাংকের মুনাফা কমে যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতির উন্নতি করতে চাইলে একদিকে আদায়ে জোরদার করতে হবে। পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব।

এদিকে গত জুলাই থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করার পর প্রতি মাসে সুদহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত জুলাইয়ে মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল (স্মার্ট) সুদহার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। আগস্টে তা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, সেপ্টেম্বরেও অপরিবর্তিত ছিল। অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশে। ফলে আগস্টে কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তাকে ১০ দশমিক ২০ শতাংশে ঋণ নিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০