Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 6:58 pm

ঋণ নিয়মিতকরণে অযৌক্তিক দাবি যেন মেনে না নেয়া হয়

ঋণের ৮০ শতাংশ বকেয়া থাকলেও খেলাপি না করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। সংস্থাটি চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মেয়াদি ঋণের কিস্তির ২০ শতাংশ পরিশোধ অনুমোদন করে কিস্তির অবশিষ্ট টাকা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী চার বছরের মধ্যে পরিশোধ করার সুযোগসহ বেশ কিছু অনুরোধ জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বেশ কয়েকটি যুক্তিও তুলে ধরা হয়েছে।

কভিডের পর থেকেই নানা কারণে সারা বিশ্বেই প্রতিকূল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত সব শ্রেণির মানুষ। কিন্তু ঢালাওভাবে সবাইকে প্রণোদনা ও নীতিসহায়তা দেয়া কি সম্ভব! আমরা মনে করি, বিটিএমএ’র দাবি সাধারণ বিবেচনায়ই অগ্রাহ্য হওয়ার কথা। তাদের দাবি কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সরকারের পক্ষে সবার দাবি মেনে নেয়া সম্ভব হবে নাকি উচিত হবে। যারা ঋণ পরিশোধে নিয়মিত, তাদের সুযোগ দেয়া না হলে তা অন্যায্য হবে। খেলাপি ঋণ আমাদের ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা। এটি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্যমতে, খেলাপি ঋণের সঙ্গে অবলোপন করা এই কুঋণ যুক্ত করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে বলেই ধারণা।

বিশেষজ্ঞরা তথ্যপ্রমাণসহ বলে থাকেন, সব সুবিধা খেলাপিদের জন্যই। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাই এর প্রধান কারণ। ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, দেশে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ এখানে বছরের পর বছর ধরে খেলাপিদের নানা ধরনের ছাড় দেয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলানো হয়েছে বারবার। বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রতিযোগী এবং তুলনীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের হারই সবচেয়ে বেশি। একই ধরনের পর্যবেক্ষণ আইএমএফেরও। আইনের প্রয়োগের দুর্বলতা এবং স্বচ্ছতার অভাব ব্যাংক খাতকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে ঢালাওভাবে ঋণ নিয়মিতকরণে আরও ঝুঁকিতে ফেলবে।

আমরা মনে করি, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের প্রশ্রয় দেয়া উচিত হবে না। ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে গেলে লোকসানে পড়ে গ্রাহক খেলাপি হতে পারেন। কিন্তু ঋণ কি তিনি প্রতিশ্রুত খাতে বিনিয়োগ করেছেন নাকি অন্য কাজে ব্যয় করেছেন। পাচারও হতে পারে। ঋণ নিয়ে ব্যবসা না করে আত্মসাতের দৃষ্টান্ত কম নয়। যদিও ‘ইচ্ছাকৃত’ বা ‘স্বভাবজাত’ খেলাপিদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আলাদা নীতিমালা নেই; তবুও এই খেলাপিদের লেনদেন বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানেন। কারণ কোনো ঋণ এক দিনে খেলাপিতে পরিণত হয় না। সাধারণ মানুষও অনেককে চেনেন। ঋণের কিস্তি পরিশোধে বিলম্ব হলেই ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋণগ্রহীতাকে তাগিদ দেন। ব্যবসা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করেন। নিজস্ব নিয়মে খোঁজখবর নেন। তাই কোনো প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃত খেলাপি নাকি প্রকৃতই ক্ষতিগ্রস্ত, ব্যাংক কর্মকর্তাদের তা জানার কথা। ঢালাওভাবে ঋণ মওকুফ বা সুবিধা দেয়া ঠিক হবে না।