Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 4:44 am

ঋণ পরিশোধে অনাগ্রহ ওষুধ খাতের

জয়নাল আবেদিন: করোনা মহামারি যেন কিছু খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদ। পুরো বিশ্ব যখন আর্থসামাজিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, ঠিক তখনই সংকটাপন্ন এই অবস্থাকে মওকা হিসেবে নিয়েছে ওষুধ শিল্পের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্রেতারা। এযাবৎকালের সর্বোচ্চ ব্যবসা করে চলেছে খাতটি। তবে হাতে অগাধ অর্থ থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করছেন না ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের মালিকরা। কাজটিকে মোটেও ভালো মনে করছেন না বিশ্লেষকরা।

করোনাভাইরাসের আঘাতে যখন সারা বিশ্বই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, ঠিক তখনই বিশ্বব্যাপী চাঙা হয়ে উঠেছে ওষুধসহ স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে সার্বিক অর্থনীতির কথা চিন্তা করে ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্লেষকদের মতে, তা ছিল যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। কিন্তু সুযোগ থাকার পরেও ঋণ পরিশোধ না করাকে ভালো চোখে দেখছেন না তারা।

সূত্রমতে, ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে ৭১৬ কোটি টাকা এবং হাসপাতাল-ক্লিনিকে ৪৯৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংক লিমিটেড। তবে এ ঋণের কিস্তি করোনায় ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংকটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হালিম চৌধুরি শেয়ার বিজকে বলেন, করোনাকালীন ক্ষতির কারণে সব খাতই চাপের মধ্যে রয়েছে, তাই ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের মধ্যে ধীরগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। অন্যান্য খাতের মতোই ফার্মাসিউটিক্যাল খাতেরও রিকভারি কমে গিয়েছিল। এখন তুলনামূলকভাবে ভালো। খাতটির ব্যাবসা এখন আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেওয়া সুযোগটাই নিতে চাচ্ছে অনেকে।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন খাত। এছাড়া খাদ্য উৎপাদন, ফার্মাসিউটিক্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন খাতের ব্যবসা আগের চেয়ে বেড়েছে। আমরা এখন সবার সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়িয়েছি। বুঝিয়ে-শুনিয়ে টাকাগুলো আদায়ের চেষ্টা করছি। এতে সাড়াও পাচ্ছি খুব ভলো। এই পরিস্থিতিতেও আদায় বা রিকভারি আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডকে ৪৮৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। এর মধ্যে ৩৭১ কোটি টাকা ফান্ডেড এবং বাকি ১১৫ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড ঋণ।

এ বিষয়ে অ্যাসোসেয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সেক্রেটারি ও প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহেল আহমেদ বলেন, গত চার থেকে পাঁচ মাস ধরে শ্লথ গতিতে চলছে লোন রিকভারি। যারা পুরোনো খেলাপি ও যাদের ঋণ অবলোপন করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকেও ঋণ আদায় কার্যক্রম চলছে। আমাদের ব্যাংকের ক্ষেত্রে  ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের বেশিরভাগ গ্রাহকই নিয়মিত করে যাচ্ছে। তবে কিছু গ্রাহক আছে যারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেওয়া সুযোগটা নিতে চাচ্ছে। সে সংখ্যাটা খুবই কম।

আলোচ্য সময়ে (২০১৯) জেএমআই হসপিটালকে ২২৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। এছাড়া ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে সাউথইস্ট ব্যাংক ঋণ দিয়েছে ১৭৬ কোটি টাকা। শুধু উল্লিখিত ব্যাংগুলোই নয়, প্রায় সব ব্যাংকেরই বিনিয়োগ রয়েছে হাসপাতাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে। কিন্তু সুযোগ পেয়ে ব্যাংকঋণ পরিশোধে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে ছোট-বড় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে। অথচ অন্যান্য সময়ের তুলনায় তাদের ব্যবসা বেড়েছে বহুগুণ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সামর্থ্য থাকার পরেও ঋণ পরিশোধ না করার কাজটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। গ্রাহকরা সরকার থেকে যে সুযোগটা নিচ্ছে, আর্থিক খাত ও সমাজকে তার প্রতিদান দেওয়া উচিত। কিন্তু ব্যবসা সচল থাকার পরেও ঋণ পরিশোধ না করলে সেই প্রতিদান প্রকাশ পায় না।  

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ঢালাওভাবে খেলাপি অব্যাহতি দেওয়ার আগেই খাতভিত্তিক বিভাজনের প্রয়োজন ছিল। যেসব খাতের ব্যবসা চলমান রয়েছে, তাদের ঋণ পরিশোধের বিষয়ে আলাদা নির্দেশনা দেওয়া যেত।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও নতুন করে খেলাপি হিসেবে দেখানো যাবে না। করোনার কারণে দেশের আর্থিক খাতকে বাঁচাতে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগে সামর্থ্য থাকলেও এখন ঋণ পরিশোধ করছে না অনেকে।