Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:20 pm

ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা আর নয়: বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাকালে ঘোষিত গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা আর দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দীর্ঘ দুই বছর সুবিধা দেয়া হয়েছে। গতকাল ব্যাংকার্স সভা শেষে বিশেষ এ সুবিধা উঠিয়ে নেয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, করোনার কারণে ২০২০ সালজুড়ে কোনো টাকা পরিশোধ না করলেও গ্রাহকদের খেলাপি করা যাবে না, এমন সুবিধা দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালে ২৫ শতাংশ পরিশোধ করেই খেলাপির বাইরে ছিলেন গ্রাহক। বেশিরভাগ গ্রাহকই এ টাকা পরিশোধ করেছেন। কিছু গ্রাহক এখনও নতুন সুবিধার আশায় রয়েছেন। কিন্তু এ সুবিধা আর বাড়ছে না।

তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থের মাধ্যমেই খেলাপি হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। এখানে বিশেষ সুবিধা হিসেবে আরও রাখা হয়েছে এক দশমিক ৫০ শতাংশ প্রভিশনে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ। এ সুবিধা শুধু করোকালে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য।

এর আগে ১৫ ডিসেম্বর ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর আবেদন করে এফবিসিসিআিই। এফবিসিসিআই জানায়, করোনায় ব্যবসায়ীরা এখনও ভয়াবহ অবস্থা পার করছেন। তাই ২৫ শতাংশ পরিশোধের শর্ত শিথিল করে ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধার মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। তবে ব্যবসায়ীদের সে দাবিতে আর সায় দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকার্স সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।

এদিকে করোনাকালে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে শতভাগ সফলতা অর্জন করা ১৩ ব্যাংক ও চার আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। প্রথম ধাপে যারা সিএসএমই ঋণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের হুশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) চলতি মূলধন সুবিধার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিলের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। তবে গ্রাহকদের দিতে হচ্ছে চার শতাংশ। বাকি পাঁচ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দিচ্ছে।

এ প্রণোদনা শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য যাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে অগ্রণী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব); বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যেÑইউসিবিএল, প্রিমিয়ার, উত্তরা, প্রাইম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, মধুমতি, ব্যাংক এশিয়া, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, ইস্টার্ন ও ব্র্যাক। এছাড়া চার আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো আইপিডিসি, আইডিএলসি, লংকাবাংলা ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।

২০২০ সালজুড়ে ঋণের কিস্তির এক টাকা শোধ না করলেও গ্রাহককে খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংক। তবে ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি ছয় লাখ টাকা খেলাপি ঋণ নিয়ে শুরু হয় ২০২১ সাল। চলতি বছর নতুন করে আগের মতো সব সুযোগ দেয়া হয়নি। তবে বিভিন্ন শিথিলতার আওতায় একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না। এরপরও খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়। বর্তমানে তা এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সব শেষ ব্যাংক খাতের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের আট দশমিক ১২ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, একেএম সাজিদুর রহমান ও আবু ফরাহ মোহাম্মদ নাসের। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস-উল ইসলাম, রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান, এবি ব্যাংকের তারিক আফজাল ও মধুমতি ব্যাংকের এমডি সফিউল আজম।