ঋণ পুনঃতফসিলেও আগ্রহ নেই মোস্তফা গ্রুপের

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে গড়ে ওঠে মোস্তফা গ্রুপ। তার মৃত্যুর পর ব্যবসায়ের হাল ধরেন সাত ছেলে। তাদের উচ্চাভিলাষ, অদূরদর্শিতা ও অযোগ্যতায় ডুবছে পুরো গ্রুপের ব্যবসা। এতে গ্রুপটি খেলাপি হয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এসব প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। যদিও খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে এখনও আবেদন করেনি গ্রুপটি।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, মোস্তফা গ্রুপের ৩১ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যাংক থেকে মোট এক হাজার ৪৩২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ফান্ডেড (নগদ) এক হাজার ৪১৩ কোটি এবং নন-ফান্ডেড (এলসি ও ব্যাংক গ্যারান্টি) ১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সুদে-আসলে এ ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকায়।

মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি ৪৩৫ কোটি টাকা ও অবলোপন করা হয়েছে ২০০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এছাড়া ৬০৪ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। খেলাপি হলেও আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে এ ঋণখেলাপি দেখানো যাচ্ছে না। এছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা। এ ঋণের বেশিরভাগই খেলাপি। ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত জামানত নেই। ঋণের টাকা ব্যবসায় না লাগিয়ে অন্য কাজে লাগানো হয়েছে, যে কারণে বেশিরভাগ ঋণই আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মোস্তফা গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠানের কাছে ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার সুদাসলে পাওনা ২৬৫ কোটি টাকা। এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার ১৩৮ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় এমএম ভেজিটেবল অয়েল প্রডাক্টস লিমিটেডের ১১৩ কোটি ৬৬ লাখ, ইস্টার্ন ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় তিন প্রতিষ্ঠানের ৭৮ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ২০০ কোটি, প্রাইম ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ৮০ কোটি, পূবালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ৬৮ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ৪০ কোটি, এক্সিম ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ৪০ কোটি, রূপালী ব্যাংকের লালদীঘি শাখায় ৫০ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় মোস্তফা করপোরেশনের ৩৫ কোটি ৫০ লাখ, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ৫৬ কোটি ৫০ লাখ, উত্তরা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ৩৩ কোটি ৫০ লাখ, এনসিসি ব্যাংকের আন্দরকিল্লা শাখায় ৫৫ কোটি ৫০ লাখ, স্ট্যার্ন্ডাড ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ২১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকে সাড়ে পাঁচ কোটি, ইউসিবিএলের জুবিলী রোড শাখায় ১৬ কোটি ও ব্যাংক আল-ফালাহ আগ্রাবাদ শাখায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ছে। এছাড়া মাইডাস ফিন্যান্স, প্রিমিয়ার লীজিংসহ আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ আছে।

মোস্তফা গ্রুপের সঙ্গে লেনদেন আছে এমন একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ৬৫ বছরের ব্যবসা পরিচালনা করার অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ এ গ্রুপটির ছিল বিভিন্ন ধরনের তেল বিপণন, রি-রোলিং মিল, চা, পরিবহন, পেপার মিল, শিপিং লাইনস, জাহাজ ভাঙাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান সততা, মেধা, দক্ষতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে গড়ে তোলেন গ্রুপটি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ছেলেদের কারণে ডুবেছে পুরো গ্রুপের ব্যবসা। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়; বাকিগুলো বন্ধ হওয়ার পথে, অথবা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

খেলাপি ঋণের বিষয়ে মোস্তফা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক স্বপন দাশগুপ্ত শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আসলে মোস্তফা গ্রুপের অবস্থা খুবই খারাপ। গ্রুপের ব্যবসা তো নেই। হয়তো মনে হচ্ছে অনেক বড় কিছু, কিন্তু টুল-টেবিল ছাড়া আর কিছু নেই। তবে খেলাপি ঋণ পরিশোধে আমরা জায়গা বিক্রি করার জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু জমি কেনার ক্রেতাও পাচ্ছি না। আর খেলাপি ঋণ দীর্ঘমেয়াদি পুনঃতফসিলকরণে দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট তো অনেক বড় সুযোগ। এটা মিস করা উচিত নয়।’

যদিও ঋণ পুনঃতফসিলে গ্রুপটির পক্ষ থেকে কোনো আবেদন করা হয়নি বলে জানান বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ বেলাল। তিনি বলেন, ‘মোস্তফা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মোস্তফা করপোরেশন আমাদের খেলাপি গ্রাহক। প্রতিষ্ঠানটির কাছে আমাদের পাওনা প্রায় ৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর এ পাওনা আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাওনা আদায়ে বহুভাবে চেষ্টা করেছি, তবুও আদায় করতে পারছি না। সব সময় কথা দিলেও এখনও টাকা বুঝে পাইনি। তারা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলকরণে আবেদন করেনি। এ বিষয়ে তাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০