ঋণ পেতে প্রতি বছর রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব এডিবির

ইসমাইল আলী: ঢাকা-চট্টগ্রাম মিটারগেজ রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। এজন্য কয়েকটি প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। প্রকল্পগুলোয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে বড় অঙ্কের ঋণ চায় রেলওয়ে। পাশাপাশি আরও কয়েকটি প্রকল্পে ঋণ চাওয়া হয়েছে। তবে এ ঋণ পেতে হলে আগে রেলের ট্যারিফ রিফর্ম পলিসি কার্যকর করতে হবে। অর্থাৎ প্রতি বছর রেলের ভাড়া বৃদ্ধি করতে হবে। এমনটাই শর্ত দিয়েছে এডিবি।

গতকাল রেলভবনে এডিবি ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ শর্ত দেয় সংস্থাটি। রেলওয়ের জন্য প্রণীত ট্যারিফ রিফর্ম পলিসি কার্যকরের মাধ্যমে প্রতি বছর ভাড়া সমন্বয়ের শর্ত দেয়া হয়। যদিও এখনই ভাড়া বৃদ্ধি সম্ভব নয় বলে জানায় রেলওয়ে। এক্ষেত্রে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রতি বছর ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব অযৌক্তিক বলে জানানো হয়।

সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে সাতটি প্রকল্পে এডিবির কাছে ঋণ চাওয়া হয়। এর মধ্যে চারটি প্রকল্পে আগামী তিন বছরের মধ্যে ৪০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি পাইপ লাইনে থাকা আরও কিছু প্রকল্পে ঋণ চাওয়া হয় বৈঠকে। তবে ঋণ দেয়ার আগে রেলওয়েকে ট্যারিফ রিফর্ম পলিসি কার্যকরের শর্ত দেয় এডিবি। এক্ষেত্রে প্রতি বছর রেলের ব্যয় বৃদ্ধির অনুপাতে ভাড়া বাড়াতে বা কমাতে হবে।

ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও দুটি শর্ত দিয়েছে এডিবি। এগুলো হলোÑরেলের হিসাব ব্যবস্থাপনায় ইআরপি (এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং) সফটওয়্যার চালু ও কনটেইনার কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করা। রেলওয়ে রিফর্মের অংশ হিসেবে এগুলো দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের শর্ত দেয় সংস্থাটি।

তথ্যমতে, ২০০৬ সালে এডিবির ঋণে রেলওয়ে রিফর্ম প্রকল্প নেয়া হয়। এর আওতায় কয়েকটি কার্যক্রম বাস্তবায়নের শর্ত ছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ট্যারিফ রিফর্ম পলিসি প্রণয়ন ও কার্যকর করা। ২০১৩ সালে এ পলিসি প্রণয়ন করা হয়, যা পরবর্তীকালে সরকার অনুমোদন করে। এক্ষেত্রে রেলের লোকসান কমাতে প্রতি বছর ভাড়া সমন্বয়ের শর্ত ছিল। অর্থাৎ প্রতি বছর রেলের পরিচালন ব্যয় যে অনুপাতে বৃদ্ধি পাবে, সে অনুপাতে ভাড়া বৃদ্ধি করতে হবে।

পলিসিটির আওতায় ২০১৬ সালে একবার ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। সে সময় যাত্রী ভাড়া পাঁচ শতাংশ এবং পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনে ১০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া ২০১২ সালেও রেলের বিভিন্ন রুটে ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় বলে জানানো হয়।

এ সময় আরও জানানো হয়, ২০১৯ সালের মার্চে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। পরে তা যাচাই-বাছাইয়ে উচ্চ পর্যায়ের রিভিউ কমিটি করে মন্ত্রণালয়। সরকার অনুমোদন করলে দ্রুতই তা কার্যকর করা যাবে।

সূত্র জানায়, ওই কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ২০২০ সালে। সেটি কার্যকর হলে রুটভেদে শোভন চেয়ারে ভাড়া বাড়বে ২০-৩০ শতাংশ। এছাড়া প্রথম শ্রেণির (নন-এসি) সিট ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়বে। আর এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) ও এসি সিটে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়বে। এছাড়া প্রথম শ্রেণি নন-এসি বার্থে ভাড়া বাড়ছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং এসি বার্থে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। তবে সাধারণ তথা নি¤œ আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে দ্বিতীয় ও এর নিচের কোনো আসনে ভাড়া বাড়বে না। শুধু এসব ক্ষেত্রে ন্যূনতম ভাড়ার হার বৃদ্ধি পাবে।

যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনেও ভাড়া ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। আর রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহনে বিদ্যমান ৫০ শতাংশ রেয়াতি সুবিধা কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।

এদিকে ইআরপি সফটওয়্যারের বিষয়ে এডিবি জানায়, রেলওয়ে রিফর্মের অন্যতম অংশ ছিল ইআরপি সফটওয়্যার চালু করা। ২০১৮ সালে প্রকল্পটি শেষ হলেও এটি এখনও কার্যকর হয়নি। এ বিষয়ে বৈঠকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকার সমন্বিত বাজেট ও অ্যাকাউন্টিং ব্যবস্থা (আইবাস) চালু করেছে। এ সিস্টেমের সঙ্গে রেলওয়ে যুক্ত হয়েছে। আর ইআরপি সফটওয়ার সংস্কার আইবাস ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বিত। এছাড়া রেলওয়ে ই-জিপি ব্যবস্থা চালু করা হয়।

পাশাপাশি রেলের কনটেইনার সার্ভিসকে কনটেইনার কোম্পানির আওতায় আনার শর্ত দেয়া হয়। এ বিষয়ে রেলওয়ে জানায়, ২০১৬ সালে কনটেইনার কোম্পানি গঠন করেছে। এ কোম্পানি পিপিপির ভিত্তিতে চট্টগ্রামে একটি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে জানান, রেলের ভাড়া বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে প্রতি বছর ভাড়া চাইলেও বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। এছাড়া ইআরপিও এখন চালু করা সম্ভব নয়। এটি চালু করতে হলে নতুন প্রকল্প নিতে হবে। আর কনটেইনার পরিবহনের কাজ রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগ করে থাকে। এজন্য পৃথক কোম্পানি চালু করলে বিদ্যমান জনবলকে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হবে। তাই প্রতিটি শর্তই অযৌক্তিক, যা কার্যকর করা সম্ভব নয়। আর এসব শর্ত কার্যকর করা ছাড়া রেলওয়েকে ঋণ দিতেও আগ্রহী নয় এডিবি। ফলে সংস্থাটির কাছে ঋণের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০