ঋণ ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিন

জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) বুধবার ‘এ ওয়ার্ল্ড অব ডেট: এ গ্রোয়িং বারডেন টু গ্লোবাল প্রসপারিটি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের তথ্য থাকে। ডেটাবেজ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ২০২৩ সালে সরকারের বিদেশি ঋণ ছয় বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলার বেড়েছে। গত বছর শেষে সরকারের বিদেশি ঋণ ছিল ৬৮ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালে ছিল ৬২ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সাল শেষে মাথাপিছু বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০১ ডলার, যা ২০২২ সালে ছিল ৩৭৫ ডলার। ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের রাজস্ব আয়ের ২৫ শতাংশ চলে যাচ্ছে, যা জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ ও স্থিতি দ্রুত বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ ঋণ কমলেও বিদেশি ঋণ বাড়ায় বর্তমানে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে জিডিপির ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। দ্রুত বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধিতে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান সংকটে পড়েছে। বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ঋণ যুক্তরাষ্ট্রের, ৩৩ হাজার বিলিয়ন ডলার। উন্নয়নশীল, উন্নত, অনুন্নতÑসব দেশকেই কোনো পর্যায়ে ঋণ নিতে হয়। চাই তা দেশের অভ্যন্তর থেকে হোক, কিংবা অন্য দেশ থেকে হোক। যে ঋণই হোক, ব্যবস্থাপনায় সতর্ক হতে হবে।

বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ নিকট অতীতে আমরা যেসব ঋণ পেয়েছি, তার সুদহার আগের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণের স্থিতিও বাড়ছে। তাই আমাদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন আয় থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে সহজ শর্তের ঋণপ্রাপ্তির বিপরীতে তুলনামূলকভাবে কঠিন শর্তের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এ উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে দেশ যেসব ঋণ পেয়েছিল, সেগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুদহার যেমন ছিল বেশি, তেমনি গ্রেস পিরিয়ড ও মেয়াদকাল ছিল কম। অপ্রত্যাশিত হলো, বিগত সময়ে বাংলাদেশ বেশ কিছু প্রকল্পের জন্য সরবরাহকারী ঋণ বা সাপ্লয়ার্স ক্রেডিট নিয়েছেÑযে ঋণের সুদহার বেশি; অন্যান্য শর্তও কঠিন। কিছু ঋণ নেয়া হয়েছে নমনীয় লাইবর/ এসএফওআর সুদহারে। কয়েক বছর আগেরকার এক শতাংশের জায়গায় এই সুদহার এখন দাঁড়িয়েছে চার-পাঁচ শতাংশে। ফলে প্রাক্কলিত সুদের হারের চেয়ে প্রকৃত হার কোনো কোনো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কিছু কিছু বড় প্রকল্পের জন্য যে ঋণ নেয়া হয়েছে, তার গ্রেস পিরিয়ড বর্তমানে শেষ হচ্ছে। নিয়ম হলো, গ্রেস পিরিয়ডের সময় কেবল সুদ পরিশোধ করতে হয়, তার পরবর্তী সময়ে মেয়াদকাল শুরু হলে সুদের সঙ্গে আসলও যোগ হয়। ফলে ঋণ পরিষেবার দায়ভার বৃদ্ধি পায়। আমাদের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগামী কয়েক বছর বাড়তে থাকবে। ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সমস্যায় পড়েনি। তবে পড়বে না, সে ব্যাপারে উদাসীন থাকা ঠিক হবে না। অতি মূল্যায়িত প্রকল্প ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্র প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি করে। তাতে ঋণের খরচ বেড়ে যায়। পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প নির্বাচনে অধিকতর সতর্কতা, বাস্তবায়নে সুশাসন ও জাবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০