সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: দেশে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের অধিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এ ব্যস্ততাকে কাজে লাগিয়ে সংঘবদ্ধ চক্র ও অসৎ আমদানিকারকরা নানা কৌশলে শুল্ক ফাঁকির অপচেষ্ট করে। বিপরীতে ফাঁকি প্রতিরোধে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা কিছু চালান লক করে। আর এসব লক করা চালানের মধ্যে ৮০ শতাংশের অধিক চালানে অনিয়ম পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, এআইআরএ’র শাখা কর্তৃক সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতেই ৩৩৫ চালান অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে লক করা হয়। এর মধ্যে ১৮৫ চালানের কায়িক পরীক্ষা করা হয়। বাকি ১৫০ চালানের এখনও কায়িক পরীক্ষা হয়নি।
এদিকে, কায়িক পরীক্ষা করা ১৮৫ চালানের মধ্যে মাত্র ৩৬ চালানে ঘোষণা মোতাবেক পণ্য পাওয়া যায়। অবশিষ্ট ১৪৯ চালানে অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়। যার মধ্যে ২১ চালানের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আর এসব নিষ্পত্তি করা চালানের বিপরীতে রাষ্ট্রের অনুকূলে রাজস্ব জমা হয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৪ কোটি টাকা অনিয়মের বিপরীতে জরিমানা ও ৩০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব। তবে জব্দ করা চালানের সবগুলোর কায়িক পরীক্ষা হলে মিথ্যা ঘোষণার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানান এআইআর কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি খাতুনগঞ্জের নুরুল আবছার চৌধুরী মার্কেটের ডিএম ট্রেডিংয়ের একটি চালান শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস জব্দ করে। যাতে তেঁতুলবিচি আমদানির ঘোষণায় চট্টগ্রাম বন্দরে সুপারি আনা হয়েছিল। আমদানিকারকের ঘোষিত পণ্যের শুল্কহার মাত্র ১৫ শতাংশ। অপরদিকে সুপারির শুল্কহার ছিল ১০৪ শতাংশ। এতে ১১ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা ছিল।
ঠিক একই কায়দায় অন্যান্য আমদানিকারকও শুল্ক ফাঁকির মাধ্যমে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে। তাই নিয়মিত শনাক্তকরণের বাইরেও এআইআর শাখা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কিছু চালান জব্দ করে। পাশাপাশি পণ্য চালানে সন্দেহ হলেও কল করা হয়। তারপর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে ছাড় দেওয়া হয়। আর যেসব চালান এআইআর শাখা জব্দ করে, তার মধ্যে ৮০ শতাংশের ওপরে মিথ্যা ঘোষণার পণ্য পাওয়া যায়। সম্প্রতি কয়েক মাসে আটক করা চালানের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার নূর-এ-হাসনা সানজীদা অনসুয়া শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখা চোরাচালান, অর্থ পাচার ও মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকিসহ অনিয়ম ধরার জন্য সব সময় তৎপর থাকে। এর ফলশ্রুতিতে ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৫ চালান লক করা হয়েছে। তার মধ্যে অর্ধেকের কায়িক পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, মাত্র ৩৬ চালানে ঘোষণা মোতাবেক পণ্য পাওয়া যায়। বাকি ১৪৯ চালানেই মিথ্য ঘোষণার পণ্য রয়েছে; অর্থাৎ জব্দ করা চালানের ৮০ শতাংশই মিথ্যা ঘোষণায় আনা হয়।’