২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সফলভাবে পরিচালিত হয়েছে হাম ও রুবেলার গণটিকাদান কার্যক্রম। এর আওতায় তিন কোটি ৬০ লাখ শিশুকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে। কভিড-১৯-এর তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে এখন। দেশের কোথাও কোথাও বন্যার হুমকি টের পাওয়া যাচ্ছে। এসবের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে নেয়ার কাজটি কঠিন থেকে কঠিনতর চ্যালেঞ্জে পরিণত হচ্ছে দিনকে দিন। এই সময় বাংলাদেশের শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে না। যেকোনো মূল্যে এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের শিশুদের জীবন বাঁচানোর যুদ্ধে আমরা হেরে যেতে পারি না। এই যুদ্ধ কেবল বাংলাদেশের নয়, গোটা বিশ্বের। আর তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, গ্যাভিসহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থা এক হয়ে টিকা এজেন্ডা ২০৩০ (আইএ২০৩০) প্রকাশ করেছে। এই নতুন বৈশ্বিক কৌশল উচ্চাভিলাষী বলে কথা উঠলেও আরও শক্তিশালী টিকাদান ব্যবস্থা ছাড়া বর্তমান সংকট কাটানোর কোনো উপায় যে নেই, সে ব্যাপারে মতামত গড়ে তুলতে সাহায্য তো করছে।
কী আছে এই এজেন্ডায়? একেবারে শিশুকাল থেকে শুরু করে কৈশোর এবং আরও বড় হয়ে ওঠা, অর্থাৎ সারাজীবন ধরে টিকা দেয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এতে। পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু ঠেকানো যাবে, যাদের ৭৫ শতাংশ হচ্ছে নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের বাসিন্দা। এতে শৈশব এবং কৈশোরে প্রায়োজনীয় টিকার ৯০ শতাংশ দেয়া হবে। একবারও টিকা পায়নি, এমন শিশুর সংখা নামিয়ে আনা যাবে বর্তমানের অর্ধেকে। এই আশাবাদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। তবে এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সব দেশ ও সংস্থাকে এক হয়ে কাজ করতে হবে, জনগণকে সচেতন করতে হবে, ঔষধশিল্প ও বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে টিকার গবেষণা ও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হবে।
কভিড সংক্রমণ থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি, টিকা সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। অবহেলার পরিণতি হয় ভয়াবহ। কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হচ্ছে। তাহলে শিশুদের কেন টিকা দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে রোগ থেকে সুরক্ষা দেব না? শিশুদের টিকা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
পিআইডি নিবন্ধন