হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫৩-১৯৩১) প্রাচ্যবিদ্যা বিশারদ এবং সংস্কৃতের পণ্ডিত। জন্ম ২২ অগ্রহায়ণ ১২৬০, ৬ ডিসেম্বর ১৮৫৩। তার পরিবারের আদিনিবাস ছিল খুলনার কুমিরা গ্রামে। তিনি সংস্কৃত কলেজে ১৮৭১ সালে এন্ট্রান্স, ১৮৭৩ সালে ফার্স্ট আর্টস, ১৮৭৬ সালে বি.এ এবং ১৮৭৭ সালে সংস্কৃতে অনার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতঃপর হরপ্রসাদ এম.এ ডিগ্রি ও ‘শাস্ত্রী’ উপাধি অর্জন করেন। তখন এম.এ পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না, অনার্স গ্র্যাজুয়ে়টরা এম.এ ডিগ্রি পেতেন। সংস্কৃত কলেজে সংস্কৃত বিষয়ে়র ছাত্র হলেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে়র তৎকালীন সিলেবাস অনুযায়়ী তাকে বিস্তৃতভাবে ইংরেজি সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, পলিটিক্যাল ইকনোমি, অ্যালজেব্রা-ট্রিগোনোমেট্রি পড়়তে হয়ে়ছিল। ফলে সংস্কৃৃতের সঙ্গে শিকড়ে়র যোগ বজায়় রেখেও আধুনিক বিদ্যার বিভিন্ন শাখায়় তিনি পারদর্শী হয়ে় ওঠেন।
১৮৭৮ সালে হরপ্রসাদ হেয়়ার স্কুলে অনুবাদের শিক্ষক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। একই বছর তিনি কিছুদিন লক্ষৌ ক্যানিং কলেজে অধ্যাপনা করেন। পরে তিনি ১৮৮৩ সালে কলকাতার সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপক ও একই সঙ্গে বঙ্গীয় সরকারের সহকারি অনুবাদক হিসেবে কাজ করেন। সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে ১৮৮৬ থেকে ১৮৯৪ পর্যন্ত তিনি বেঙ্গল লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান হিসেবে দায়ি়ত্ব পালন করেন। ১৮৯৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে সংস্কৃত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এবং ১৯০০ সালে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হন। ১৯০৮ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। অবসর জীবনে তিনি কিছুদিন সরকারের ‘ব্যুরো অব ইনফরমেশন’-এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২১ সালে তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক পদে যোগ দেন এবং অবসর নেন ১৯২৪ সালে।
উপন্যাস ও বিচিত্র বিষয়ে় প্রবন্ধ মিলিয়ে় তার প্রায় ৩০টি রচনা বঙ্গদর্শন-এ প্রকাশিত হয় এবং বাংলা সাহিত্যে স্থায়়ী প্রতিষ্ঠা পায়়।
সংস্কৃত পুঁথি সন্ধানের সূত্রেই তার আগ্রহে প্রাচীন বাংলা পুঁথি সংগ্রহের কাজ শুরু হয় এবং এ বিষয়ে তাকে সাহায্য করেন দীনেশ চন্দ্র সেন এবং মুনশি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। এশিয়াটিক সোসাইটির গবেষণা প্রকল্পের মধ্যে হরপ্রসাদই প্রথম ‘বাংলা পুঁথি সন্ধান ও বিবরণ প্রকাশ’ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করেন।
অনুসন্ধিৎসু হরপ্রসাদ প্রাচীন বাংলার পুঁথির খোঁজে চারবার নেপাল যান। ১৯০৭ সালে তার হাতে আসে বাংলার প্রাচীনতম কবিতা-সংগ্রহ চর্যাগীতির পুঁথি। চর্যাগানের সংকলনটি আবিষ্কার ও সম্পাদনা বাংলাভাষা ও সাহিত্যের গবেষণায় তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি।
জীবনে হরপ্রসাদ বহু বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানের সম্মাননা পেয়েছেন; যার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য—কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন ফেলো; সরকারের দেয়া সম্মান ‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধি, ‘সিআইই’; ১৯২৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি ডি.লিট প্রভৃতি ১৯৩১ সালের ১৭ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়।