নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে কালক্ষেপণ, একপক্ষীয় সিদ্ধান্তে একটি কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টির আশঙ্কায় কনটেইনারে বৈদ্যুতিক তালা লাগানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে পোর্ট ইউজার্স ফোরাম।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে ফোরামের সভায় এ দাবি জানানো হয়।
ফোরাম ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম কনটেইনারে বৈদ্যুতিক তালা লাগানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘২০১০ ও ২০১৩ সালে বৈদ্যুতিক তালা লাগানোর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তখনও ব্যবসায়ীরা রাজি হননি। এবারও আমরা এ সিদ্ধান্ত রাজি হব না। এ বিষয় বাতিলের দাবি জানিয়ে চিঠি লিখেছি।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অবকমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘বৈদ্যুতিক তালার বিষয়টা হচ্ছে একধরনের চাঁদাবাজি। এর সুফল আমরা কিছুই পাব না। উল্টো সময়ক্ষেপণের জন্য বন্দরের হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে বিঘœ ঘটবে। অচল হয়ে পড়বে বন্দর।’
বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এমনিতে বন্দরে নানা সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এর মধ্যে সিল ব্যবহারের নামে খরচ বাড়ানো কতটুকু যুক্তিযুক্ত, তা ভেবে দেখা উচিত। একটি কোম্পানিকে একচেটিয়া ব্যবসা পাইয়ে দিতে বৈদ্যুতিক তালা প্রচলনের চেষ্টা হচ্ছে।’
এনবিআর ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি এনবিআর ইলেকট্রিক সিল-লকসংক্রান্ত বিধিমালা জারি করে। কেবল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রেই এ প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে যেসব পণ্য আইসিডি বা অফ-ডকে স্টার্ফিং করা হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রেই বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অফডক এবং রফতানি পণ্যের ক্ষেত্রে অফ-ডক থেকে বন্দর পর্যন্ত সিল-লক ব্যবহারের ফি ৬০০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫০ টাকা ধার্য করা হয়।
পরবর্তী সময়ে বিধিমালার আওতায় তালিকাভুক্তির জন্য ‘আলিফ করপোরেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনবিআর থেকে অনুমতি দিয়ে আদেশ জারি করা হয়। এদিকে সিল-লক ব্যবহারের বিধিমালা বাতিলের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন ট্রেডবডির পক্ষ থেকে এনবিআরে চিঠি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানিকারকদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে আমদানি-রফতানি করতে হচ্ছে।
পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে এ দেশের রফতানিকারকদের পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ভীষণ কষ্টসাধ্য। তার ওপর কনটেইনারে বাধ্যতামূলক ইলেকট্রনিক সিল ও লক ব্যবহার ব্যবসা খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) আরও বাড়িয়ে দেবে। এতে রফতানিকারকদের পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আরও কষ্টকর হবে। যেখানে অতি স্বল্প খরচে কনটেইনারবাহী পরিবহন ট্র্যাক করার জন্য দেশে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, সেখানে অতিরিক্ত ফির মাধ্যমে ইলেকট্রিক সিল ও লক ব্যবহার কতটা যুক্তিসংগত এবং খরচসাশ্রয়ী, তা বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।