শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে গড়তে চাই। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। যে দেশে কোনো অন্যায় থাকবে না, অবিচার থাকবে না, মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে সেটাই আমি চাই। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শেখ রাসেল দিবস, ২০২১’-এর উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।
‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল প্রথমবারের মতো জাতীয় দিবস হিসেবে দেশব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপিত হয়েছে ‘শেখ রাসেল দিবস, ২০২১’।
দিবসটি উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ বাংলাদেশ সামনে কেমন হবে তার জন্য পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে দিয়েছি। বাংলাদেশের আগামী দিনের চলার পথে যেন আর কোনো হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র না হয়। বাংলাদেশের মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। ঘাতকের বুলেটে আর কোনো শিশুকে যেন এভাবে জীবন দিতে না হয়। আমি জাতির কাছে এই আহ্বানই জানাব যে, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কাজেই তাদের নিরাপত্তা দেয়া, তাদের ভালোবাসা দেয়া, তাদের সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, তাদের জীবনটা সার্থক-অর্থবহ করা এটাই যেন সবার আকাক্সক্ষা হয়। এটাই যেন কর্তব্য পালনকালে সবার আদর্শ হয়, সেটাই আমি চাই।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সময় তার ছোট ছেলে শেখ রাসেলকেও হত্যা করে। ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলের (বর্তমানে ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ) চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন শেখ রাসেল।
ছোট ভাইকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন শিশুকে হত্যা মানেই লাখো-কোটি শিশুর জীবনে একটা আশঙ্কা এসে যায়। বাংলাদেশে আমরা দেখেছি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল। তারাও কিন্তু শিশুদের রেহাই দেয়নি। ছোট্ট নবজাতক শিশুকেও তারা হত্যা করেছে। এমনকি মায়ের পেটের শিশুকেও হত্যা করেছে। আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখেছি ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত একই কায়দায়, ঠিক যেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছিল সেভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরেও আরও অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেনাবাহিনীতেই ১৯ বার ক্যু হয়েছে। একটা বাহিনীতে যদি ১৯ বার ক্যু হয়, তাতে ডিসিপ্লিন আছে বলে কেউ দাবি করতে পারে না। আর এই একেকটা ক্যু ধরে ধরে হাজার সৈনিক অফিসার হত্যা করা হয়েছে। অনেকের পরিবার লাশও পায়নি। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর। তাদের দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে। আবার ঠিক সেই ঘটনা আমরা দেখেছি।
পঁচাত্তরের পর বারবার এ ধরনের অত্যাচার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আবারও সেই একই ঘটনা। এরপর অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে কতভাবে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, বাসে আগুন দেয়া হয়েছে, শিশু পুড়ে মারা গেছে। এ ঘটনাও আমরা বাংলাদেশে দেখেছি। কিন্তু আমরা তো এরকম চাই না, আমরা চাই বাংলাদেশ একটা শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। প্রত্যেকটা শিশুর জীবন অর্থবহ হবে, সুন্দর হবে। এভাবে অকালে ঝরে যাবে, সেটা আমরা চাই না। একটি ফুল পূর্ণাঙ্গভাবে ফোটার আগে অকালে ঝরে যাক, এটা কারও আকাক্সক্ষা নয়। এটা কেউ চায় না।
‘পঁচাত্তরের পর শুধু হত্যা নয়, একই সঙ্গে ইতিহাসকেও মুছে ফেলা হয়েছিল’ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের অনেক প্রজš§ জানতেই পারেনি যে সেখানে কতজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, বা একাত্তর সালে কীভাবে গণহত্যা হয়েছিল আমাদের দেশে।
শিশুরা যেন নিরাপদ থাকে, এজন্য বাংলাদেশে প্রথম ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশু নিরাপত্তার জন্য আইন করে দিয়ে যান। কী দুর্ভাগ্য আমাদের, ঘাতকের হাতে তারই সন্তানদের হত্যার শিকার হতে হয়। বাংলাদেশে যেন আর এ ধরনের কোনো ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটে, সেটাই আমাদের আকাক্সক্ষা, সেটাই আমরা চাই।
শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি জিজ্ঞেস করত, তুমি কী হবে? সে বলত আমি আর্মি হবো। সে একটা আর্মি অফিসার হবে, এটাই তার জীবনের স্বপ্ন ছিল।’
