Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:57 am

একটি খাতেই লেনদেন ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

মো. আসাদুজ্জামান নূর: সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবারে উত্থান দেখা গেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। সূচকের সামান্য উত্থান হলেও স্বস্তি ফেরেনি। লেনদেন কমে আট মাসের মধ্যে সর্বনিন্মে চলে গেছে। মাত্র একটি খাতে লেনদেন ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ফলে হতাশা বেড়েছে বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে ছয়টি নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ওই নির্দেশনা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠাগুলোয় পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এ খবরের পরে প্রত্যাশা ছিল সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনেও গতি ফিরবে, কিন্তু তাতেও আস্থা ফেরেনি।

গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বেড়েছে। সূচক দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭৫৭ দশমিক ২৫ পয়েন্টে। পাশাপাশি অপর দুই সূচকও বেড়েছে। সূচক বাড়লেও এদিন আট মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ ৬৫২ কোটি এক লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৮০৭ কোটি টাকা। ফলে এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১৫৫ কোটি টাকা। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছিল ৬০২ কোটি টাকা।

গতকালের লেনদেনে ওপরের দিকে ছিল বিবিধ, ব্যাংক, ওষুধ, বিমা, বস্ত্র প্রভৃতি। আগের কার্যদিবসের মতো গতকালও লেনদেন বেশি হয়েছে বিবিধ খাতে। ১২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এ খাতের অবদান দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আগের কার্যদিবসে এ খাতের অবদান ছিল ২২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গতকাল এ খাতের ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে কমেছে তিনটির।

১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ অবদান রেখে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্যাংক খাতের বেশিরভাগ শেয়ারের দাম বেড়েছে। গতকাল এ খাতের ১৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়তে দেখা গেছে। এর বিপরীতে আটটি করে প্রতিষ্ঠানের দর হ্রাস ও অপরিবর্তিত থাকতে দেখা গেছে। আগের কার্যদিবসে এ খাতের অবদান ছিল ১৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের অবদান ছিল ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গতকাল ১৯টি কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায়। ১১টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেয়েছে ও একটির দর অপরিবর্তিত ছিল। আগের কার্যদিবসে এ খাতের অবদান ছিল ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

আগের কার্যদিবসে লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিমা খাত গতকাল চতুর্থ অবস্থানে চলে যায়। মোট লেনদেনের সাত দশমিক ৭৪ শতাংশ ছিল এ খাতের। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল ১৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গতকাল এ খাতে সর্বোচ্চ দরপতন দেখা গেছে। ৩৬টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাসের বিপরীতে দর বেড়েছে দুটির ও অপরিবর্তিত ছিল একটির।

পঞ্চম অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতের অবদান ছিল সাত দশমিক ১৬ শতাংশ। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল সাত দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ খাতের ২৭টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে কমেছে ২০টির। অন্যদিকে ধর ধরে রাখতে পেরেছে ১২টি কোম্পানি। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে তালিকায় ছিল জ্বালানি, খাদ্য, প্রকৌশল, আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি খাতের শেয়ার।

গতকাল ডিএসইতে ৩৭৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৬টির, কমেছে ১৪৭টির ও ৫৫টি কোম্পানির শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল। বেশি সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারদর বাড়াতে সব সূচক বাড়তে দেখা গেছে।

সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি সহায়ক ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে দুই দশমিক ১০ শতাংশ। এতে সূচক বেড়েছে পাঁচ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এছাড়া আইএফআইসি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, বেক্সিমকোফার্মা ও ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি সূচক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

এদিকে এপ্রিলের শেষ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পুঁজিবাজারে যে লেনদেন হয়েছে তাতে সূচক কমে গেলেও আতঙ্কের কিছু ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এখন যেহেতু সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমে আসছে তাতে বলা যায়, কোনো পক্ষ শেয়ার বিক্রি করছে, কিন্তু নতুন বিনিয়োগ করছে না। এ বিষয়টি নজরদারি করা উচিত।