Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:06 pm

একটি চারা রোপণ পদ্ধতিতে ধান চাষ প্রযুক্তির উদ্ভাবন

দীর্ঘ গবেষণার পর একটি চারা রোপণ পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন কৃষি গবেষক মো. মমিনুল ইসলাম। একটিমাত্র ধানের চারা রোপণ করে অধিক ফলনের এক অবিশ্বাস্য ফর্মুলা আবিষ্কার করেছেন এ গবেষক। সুইডিস ইউনিভার্সিটি অব অ্যাগ্রিকালচার সায়েন্স থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জনের পর বীজ সাশ্রয় ও উচ্চ ফলনের লক্ষ্যে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করেন তিনি। এ পদ্ধতি কৃষকদের উৎপাদন খরচ সাশ্রয়ী ও অধিক উৎপাদনের সর্বাধুনিক আবিষ্কার। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা পূরণে কৃষি খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে প্রযুক্তিটি। একটি চারা রোপণ পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ করলে বাড়বে উৎপাদন, লাভবান হবে কৃষক।
২০১৫ সালে গবেষক মমিনুল পরীক্ষামূলকভাবে ১৪ শতাংশ জমিতে এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন এবং প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন করেন। এরপর এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট বিষয়ের শিক্ষার্থী মো. জুবায়ের আলম রাজুর বাস্তবায়ন ও কৃষি গবেষক মমিনুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে নাটোরের সিংড়া উপজেলার ভাগনাগর কান্দীর জয়নগরে আট দশমিক পাঁচ একর জমিতে এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হয়।
দেখা গেছে, প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় একটি চারা রোপণ পদ্ধতিতে লাগানো ধানের জমি অনেক বেশি সমৃদ্ধ। একটি চারা থেকে প্রতিটি গোছে সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৩টি পর্যন্ত #তেড় নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রচলিত চাষ পদ্ধতির চেয়ে এ পদ্ধতিতে অন্তত দেড়গুণ বেশি ফলন হবে। এ পদ্ধতিতে প্রায় ৮০ ভাগ বীজ সাশ্রয় হয়ে থাকে। প্রচলিত নিয়মে আট থেকে ১০টি করে চারা রোপণ করে কৃষকরা। এ পদ্ধতি ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে, একের অধিক চারা রোপণ অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক মো. মমিনুল ইসলাম আবিষ্কৃত নতুন চাষ পদ্ধতি সফলভাবে প্রয়োগ করা গেলে বীজসাশ্রয় ও জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের সংকট মোকাবিলা করা যাবে। সর্বোপরি সামগ্রিক কৃষি অর্থনীতিতে নতুন দ্বার উম্মোচিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ধান চাষ গবেষণার বিষয়টি ২০১৬ সালে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইকোনমিকস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ কনফারেন্স শীর্ষক দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়।
পদ্ধতিটি বিভিন্ন শিরোনামে অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড জার্নাল অব সোশ্যাল বিজনেস এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি চতুর্থ সংখ্যার ৪৬ থেকে ৫৭ পৃষ্ঠা ও অস্ট্রেলেশিয়ান জার্নাল অব ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড বিজনেসের ৩নং সংখ্যার ১ থেকে ৮নং পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে অরগানিক ধান বীজ ধারণাটি সম্পর্কে আলোচনা করেন গবেষক। সেখানে বর্তমান চাষ পদ্ধতির ত্রুটি ও এ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোকপাত করেন তিনি।
কৃষি গবেষক মমিনুল জানান, অতিরিক্ত মাত্রায় ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ব্যবহার ও আবহাওয়ার পরিবর্তনসহ নানা ধরনের কারণে খাদ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল ও দরিদ্র দেশগুলো ক্রমহ্রাসমান খাদ্য উৎপাদনের বৈশ্বিক বাস্তবতায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। একদিকে জনসংখ্যার চাপ ও খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে, অন্যদিকে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের কারণে আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ায় আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে দিন দিন নষ্ট হচ্ছে মাটির ভৌত গুণাবলি, দেখা দিচ্ছে ফলন বিপর্যয়। ফসলি জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহারে সচেতন না হলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে কৃষকরা। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষকদের সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, যেহেতু কৃষিজমি বৃদ্ধি পাবে না, সেহেতু জমিতে ফলন বাড়ানো ও ব্যয় সাশ্রয় করতে হবে। কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়েছে।

গবেষণার প্রেক্ষাপট
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন থেকে তিনি এ চাষ পদ্ধতির ধারণা নেন। তিনি জানান, সুরা বাকারা’র ২৬১নং আয়াতে একটি বীজে ধান চাষের ধারণা রয়েছে। পরে সুইডিশ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাগ্রিকালচার সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন মমিনুল। তিনি কৃষিজমিতে এ পদ্ধতির সফল প্রয়োগ শুরু করেন। ২০১৫ সালে নাটোরে ১৪ শতাংশ কৃষিজমিতে এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন। নতুন এ পদ্ধতিতে চাষের ক্ষেত্রে তিনি প্রায় শতভাগ সফল হন।

ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

হ কৃষি-কৃষ্টি ডেস্ক