ব্যস্ত সময়কে পাশ কাটিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে চাইলে ঢাকার অদূরে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন। ঘুরে এসে পার্কের বিস্তারিত জানাচ্ছেন আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের রাথুরা মৌজা ও সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়নের পিরুজালী মৌজা। এ দুই মৌজার খণ্ড খণ্ড শালবনের ৪ হাজার ৯০৯ একর বনভূমি নানা প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে ৩ হাজার ৮১০ একর এলাকাকে সাফারি পার্কের মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় আনা হয়েছে। থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের মতো করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ সাফারি পার্ক। একই সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারি পার্কের ধারণাও মেলানো হয়েছে।
সাফারি পার্কের চারদিকে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থায়ী সীমানা প্রাচীর। এর মধ্যে দেশি-বিদেশি বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ পার্কে পর্যটকদের জন্য চিত্তবিনোদন সুবিধা রয়েছে।
পার্কটিকে পাঁচটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ কোর সাফারি পার্ক, সাফারি কিংডম, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক, বায়োডাইভারসিটি পার্ক ও বঙ্গবন্ধু স্কয়ার।
সাফারি পার্কের মূল আকর্ষণ কোর সাফারি। কোর সাফারিতে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে দুটি জিপ ও দুটি মিনিবাস। এ জিপ ও মিনিবাসে করেই বাঘ, ভালুক, সিংহ, হরিণ, জিরাফ, জেব্রা, আফ্রিকান বন্যপ্রাণীসহ নানা প্রাণী দেখতে পারবেন। গাড়ি থেকেই বাঘ, সিংহ কিংবা জিরাফকে ক্যামেরাবন্দি করতে পারবেন।
কোর সাফারির পাশেই রয়েছে সাফারি কিংডম। প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র, প্যারট এভিয়ারি, ক্রাউন ফিজেন্ট এভিয়ারি, ম্যাকাউ ল্যান্ড, ছোট পাখিশালা, ফেনিস ডাক গার্ডেন, কুমির পার্ক, প্রজাপ্রতি বাগান, ইমু-অস্ট্রিচ গার্ডেন, কচ্ছ্বপ ও কাছিম প্রজনন কেন্দ্র, লিজার্ড পার্ক, ভালচার হাউজ, হাতি শালা, মেরিন অ্যাকুয়ারিয়াম, অর্কিড হাউজ, পেলিকন আইল্যান্ড, ঝুলন্ত ব্রিজ, এগ ওয়ার্ল্ড, ধনেশ এভিয়ারি, প্রাইমেট হাউজ, লেক জোন, বোটিং লেক, লামচিতার ঘর, ক্যাঙ্গারু এভিয়ারি, নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম ও শিশু পার্ক রয়েছে সাফারি কিংডমে। ম্যাকাও ল্যান্ডে আছে ৩৪ প্রজাতির আফ্রিকান পাখি, মেরিন অ্যাকুয়ারিয়ামে রয়েছে প্রায় ২০ প্রজাতির মাছ। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চিকলেট মাছ, যা ২০ সেকেন্ড পরপর রঙ পরিবর্তন করে। প্রজাপতি বাগানে রয়েছে প্রায় ২৬ প্রজাতির প্রজাপতি। তবে ঝুলন্ত ব্রিজটিতে সংস্কারকাজ চলায় আপাতত এটি বন্ধ আছে।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পার্কে প্রবেশ টিকিট জনপ্রতি ৫০ টাকা। ১৮ বয়সীদের নিচে ২০ টাকা। শিক্ষা সফরে আসা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। গাড়িতে করে কোর সাফারি পার্ক পরিদর্শনে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকিট ফি ১০০ টাকা। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা। প্যাডেল বোট ভ্রমণ ৩০ মিনিট ২০০ টাকা। বাস পার্কিং ২০০ টাকা। মিনিবাস বা মাইক্রোবাস পার্কিং ১০০ টাকা। গাড়ি বা জিপ পার্কিং ৬০ টাকা। অটোরিকশা বা সিএনজি পার্কিং ৬০ টাকা।
সপ্তাহে ছয়দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য পার্কটি খোলা থাকে। সাপ্তাহিক বন্ধ মঙ্গলবার।
সতর্কতা
সাফারি পার্কটি বেশ বড়। ঘুরে দেখতে চাইলে আপনাকে প্রচুর হাঁটতে হবে। এজন্য সঙ্গে রাখতে পারেন পানি, গ্লুকোজ ও কিছু শুকনো খাবার। কোর সাফারিতে ঢোকার পর ভদ্রতা বজায় রাখবেন। অযথা চিৎকার ও হৈ-হুল্লোড় থেকে বিরত থাকুন। কোনো অবস্থাতেই কোনো প্রাণীকে বিরক্ত করবেন না। বন্যপ্রাণীকে কোনো খাবার দেবেন না। নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না। পার্কের ভেতরে যে কোনো ধরনের অপকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। পার্কের কোথাও কিছু লিখবেন না। ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনে ঘুরে আসতে চাইলে খুব ভোরে বেরিয়ে পড়াই উচিত। সারাদিন ঘুরে বিকালে চলে আসুন। রোদ বা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাতা নিন। বাচ্চাদের কাছে কাছে রাখুন। ছুটির দিনগুলোয় একটু বেশিই ভিড় থাকে। নিরিবিলি ঘুরে বেড়াতে চাইলে ছুটির দিন বাদে অন্যান্য দিনে ঘুরে আসুন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে।
নাম্বারগুলো টুকে রাখতে পারেন
বন সংরক্ষক: ০২-৮১৮১১৪২, ফরেস্ট রেঞ্জার অফিসার: ০১৮৩৭-১৯৯১৪৪, ওয়াইল্ড লাইফ রেঞ্জার: ০১৭১৬২৮১১২৯, সাফারি কিংডম: ০১৭০-৮৯০৯৩০২, সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ: ০১৯১৯-৬৯৮৯৩৬, বাঘ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ: ০১৭১১১-৮০০২৯, ফুড কোর্ট: ০১৭১১৫৮৫৩৪১।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে যেতে চাইলে ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের বাসে মাওনা চলে যান। বাঘের বাজার নামুন। ভাড়া নেবে ৭০ টাকা। সেখান থেকে অটোতে চড়ে সরাসরি পার্কে যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ১০ টাকা। এছাড়া মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে গাজীপুরে যেতে পারেন। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে পার্কে যাওয়ার জন্য লেগুনা পেয়ে যাবেন। ভাড়া ৫০ টাকা।
ঢাকা থেকে সকালে গিয়ে বিকালে ফিরে আসা যায়। তবে দূর-দূরান্ত থেকে কেউ এসে এখানে রাত যাপন করতে পারবেন। থাকতে চাইলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। এছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তার আশপাশে অনেক আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
Add Comment