নিজস্ব প্রতিবেদক: বিভাগীয় শহরে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনসহ মোট আটটি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে আট হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আট হাজার ৯৫২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে প্রকল্প সাহায্য পাওয়া যাবে ১৫ কোটি টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান প্রকল্প সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বেশি হওয়ায় এর প্রতিরোধ করা জরুরি। ভেজাল খাবারসহ নানা কারণে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে প্রতিটি বিভাগে ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং সেই অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ক্যান্সার চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা।
বিভাগীয় শহরে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে দুই হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে।
একনেক বৈঠকের শুরুতে ড. এপিজে কালাম স্মৃতি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে ফুলের তোড়া উপহার দেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
জুলাই-আগস্ট এ দুই মাসের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মান্নান বলেন, গত দুই মাসে এডিপি বাস্তবায়ন চার দশমিক ৪৮ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এ সময় খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল তিন দশমিক ৩৯ শতাংশ।
একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প মনিটরিং ও মূল্যায়ন সক্ষমতা বাড়াতে তদারকি সংস্থা আইএমইডিকে আরও শক্তিশালী করার নির্দেশ দেন। তিনি প্রকল্পের পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণে সতর্ক থাকার তাগিদ দেন।
সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো ‘ময়মনসিংহ ফুলপুর-নকলা-শেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’, এর খরচ ধরা হয়েছে ৮৫৫ কোটি টাকা, ‘রাজশাহী-নওহাটা-চৌমাসিয়া সড়কের বিন্দুর মোড় থেকে বিমানবন্দর হয়ে নওহাটা ব্রিজ পর্যন্ত পেভমেন্ট চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন খরচ হবে ৩২৬ কোটি টাকা। রাজশাহী মহানগরীর উপশহর মোড় থেকে সোনাদীঘি মোড় এবং মালোপাড়া মোড় থেকে সাগরপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’, এর ব্যয় হবে ১২৬ কোটি টাকা। এছাড়া আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে চার হাজার ৮২৬ কোটি টাকা, জুনোসিস এবং আন্তঃসীমান্তীয় প্রাণী রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। স্ট্রেংদেনিং মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন ক্যাপাবিলিটিজ অব আইএমইডি প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচ ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর থেকে মনাকষা সীমান্ত দিয়ে ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২২৫ কোটি টাকা।
সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী অংশ নেন।
একনেকে ৮ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার আট প্রকল্প অনুমোদন
