একসঙ্গে অনেক কোম্পানির অর্থবছর শেষ হওয়ায় অসুবিধা হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আইসিএমএবির সিনিয়র ফেলো মেম্বার ও সংগঠনটির সাবেক সভাপতি। বতর্মানে তিনি আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী ও চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বরত ছিলেন। সম্প্রতি পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শেয়ার বিজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি, যার সারাংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো

শেয়ার বিজ: অনেকগুলো কোম্পানি কয়েক বছর ধরে ডিভিডেন্ড দেয় না। এসব কোম্পানির তেমন লেনদেনও হয় না। এই ব্যাপারে রেগুলারদের কী ভূমিকা পালন করা উচিত?

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলতে বিএসইসিকে বুঝে থাকি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে স্টক এক্সচেঞ্জকেও নিয়ন্ত্রক বোঝায়। যেসব কোম্পানি ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না, তাদের তদারকি করা, তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা, তাদের ডিভিডেন্ড না দেয়ার কারণ কী? এগুলো দেখাশোনার দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জকে নেয়া উচিত। আইনে বিধান না থাকলেও উভয়পক্ষের সম্মতিতে করা যায়।

আসলে রেগুলেটর বলতে আমাদের দেশে যখন পুলিশিং বোঝায়, পুঁজিবাজারে রেগুলেটর বলতে পুলিশিং বুঝানো উচিত নয়। এখানে Partnership Sprit-এ কাজ করা উচিত। অনেক ছোট ছোট কোম্পানি Listed হয়েছে, তাদের Organizational Support, Knowledge Support, Organizational Skill এগুলোতে হয়তো ঘাটতি আছে বলে আমরা মনে করি। অনেক দিন আগে হংকংয়ে দেখেছি কোম্পানি পর পর তিন বছর লস দেয়ার পর স্টক এক্সচেঞ্জে তাদের লস হওয়ার কারণ এবং লস থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। আমাদের দেশে যদি স্টক এক্সচেঞ্জ এই ধরনের পদক্ষেপ চালু করে পর্যায়ক্রমে দুর্বল কোম্পানিগুলো সবল হয়ে উঠবে।

শেয়ার বিজ: ডলারের দর ৯০ টাকা থেকে ১০৫/১১০ টাকা হওয়ার ফলে যারা বিদেশি মুদ্রায় / বছরের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ নিয়েছিলেন তাদের এককথায় বাড়তি দরে লোন শোধ করতে হবে। টাকার অবমূল্যায়নের ফলে Conversion Loss কীভাবে হিসাবভুক্ত করা হবে, এই ব্যাপারে রেগুলার (BSEC, BB I FRC) থেকে নির্দেশ দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন কি?    

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: এটা একটা সংকটের বিষয় বলা যায়। আগে আমাদের দেশে সুদের হার বেশি ছিল। সেজন্য বিদেশ থেকে ২%/৩% সুদে ঋণ নিয়েছে। তখন কথা ছিল Foreign Borrowing is Cheaper than Local Borrowing| । এখন টাকার অবমুল্যায়ন হওয়ার পরে তাদের একটা বড় লায়াবিলিটি হয়ে গেছে। অতিরিক্ত লায়াবিলিটি হওয়ার কারণে তাদের যে Conversion Loss হচ্ছে এটা যদি এক বছরে রাইট-অফ করতে হয় তাহলে অনেক কোম্পানির কোয়ার্টার/বার্ষিক ইপিএস ঋণাত্মক হয়ে যাবে। এটা একটা অপ্রত্যাশিত ব্যাপার। যদিও টাকার অবমূল্যায়ন হতে পারে এটা অস্বাভাবিক কিছু না আবার অপ্রত্যাশিতও না। কিন্তু হারটা অপ্রত্যাশিত। এই যে ২০%-৩০% টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে এই অবমূল্যায়ন ফলে লায়াবিলিটিও একই হারে বেড়ে গেছে। একজন ব্যক্তি যদি ওই সময়ে এক কোটি টাকার ঋণ নিয়ে থাকে, তাহলে তাকে বর্তমানে অতিরিক্ত ২০/৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এখন যে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে হবে এটাকে এক বছরে রাইট-অফ না করে রেগুলাররা পাঁচ বছরে রাইট-অফ করার নির্দেশ দিতে পারে। এর উদাহরণও আছে, বিশেষ করে যারা মার্জিন লোন দিয়েছিল, মার্জিন লোনের পরে তাদের যে ক্ষতি হয়েছিল ২০১০-এর ফলে এই ক্ষতিটা অ্যাডজাস্ট করার জন্য রেগুলাররা ৪/৫ বছর সময় দিয়েছিল। একইভাবে লিস্টেড কোম্পানিগুলোকে Currency Demutualization -এর ফলে তাদের যে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে হবে, এটা ৫ বছরে রাইট-অফ করার জন্য একটা নির্দেশ দিতে পারে। BSEC নির্দেশ জারি করতে পারবে না, এখানে ঋজঈ-এর সঙ্গে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। নাহলে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা আসতে পারে। যেসব কোম্পানি বৈদেশিক ঋণ নিয়েছিল তারা লোকসানের সম্মুখীন হবে।

শেয়ার বিজ: ভালো কোম্পানিগুলো ভালো ডিভিডেন্ড দেয়ার পরও তাদের শেয়ার দর ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। এর কারণ কী?  

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: আমাদের দেশে প্রকৃত বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৩-৪ লাখের বেশি হবে না। ঈউইখ-এর রেকর্ড অনুযায়ী ১৭.৬৯ লাখ বিওতে বিনিয়োগ আছে। এর মধ্যে  তালিকাভুক্ত কোম্পানি আছে, পরিচালকদের শেয়ার আছে, যৌথ অ্যাকাউন্ট আছে। এগুলোকে বাদ দিলে ৫ লাখ বিনিয়োগকারীও খুঁজে পাওয়া যাবে না। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব বহুজাতিক কোম্পানি আছে, এগুলোকে ভালো কোম্পানি বলা যায়। দেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেগুলো ভালো ডিভিডেন্ড দেয়। যেমন : স্কয়ার ফার্মা, স্কয়ার টেক্সটাইল, রেনাটা, মতিন স্পিনিংসহ আরও কিছু কোম্পানি আছে যেগুলোতে বিদেশিরা বিনিয়োগ করে। Dollar Conversion-Uv Dollar Depreciation হওয়ার ফলে তারা এখন সবাই লসে আছে। ১০০ ডলার বিনিয়োগ করে তাদের ১২০ ডলার লাভ হলে, বর্তমানে বিনিয়োগ ফেরত নিতে চাইলে ১০০ ডলারও ফেরত পাবে না। Dollar Depreciation -এর ফলে চলমান এই সমস্যা শেষ কি না সেটা কেউ জানে না। সেজন্য কোম্পানিগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে ভালো কোম্পানিগুলো ফ্লোর ফ্রাইসে আটকে আছে। আমাদের দেশের চলমান অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আবার বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী, তখন ভালো শেয়ারগুলোর দাম লাফ দিয়ে বাড়বে।

শেয়ার বিজ: বিএসইসি চেয়ারম্যান এক বক্তব্যে বলেছেন দেশের % লোকও পুঁজিবাজারের জ্ঞান রাখে না। এই ব্যাপারে আপনার মন্তব্য?     

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: তার এই বক্তব্য তথ্যনির্ভর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে পুঁজিবাজারের জ্ঞান রাখার সোর্সটা কী? আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে আজ পর্যন্ত কোথাও পুঁজিবাজার সম্পর্কে পড়ানো হয় না। ১৯৯৬-এর পরে আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করি, এরপর বিআইসিএম প্রতিষ্ঠিত হয়, এরপর আবার ২০১০-এ পুঁজিবাজার ধস হয়। ২০১৭ সালে Financial Literacy বাজেটের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, ‘আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে বিভিন্ন স্তরে পুঁজিবাজার অন্তর্ভুক্ত করা হবে’। সবসময় ইকোনোমিস্টরা বলেন, আমাদের দেশের সেভিংস রেট বাড়াতে হবে। ৩২-৩৩% যদি সেভিংস রেট না হয়, তাহলে দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হবে না। তার অংশ হিসেবে পুঁজি আসলে সেভিংস করলে সেটা বিনিয়োগ করতে হবে। তার জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা আমাদের দেশের সর্বস্তরের মানুষের জন্য চালু করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিনিয়োগ শিক্ষা অবশ্যই দরকার। শোনা যায় Bangladesh Academy for Capital Market এই ব্যাপারে কাজ করছে।

শেয়ার বিজ: স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার এবং অনুমোদিত প্রতিনিধি, ২০২৩এর খসড়া বিধিমালা কতটুকু পুঁজিবাজারবান্ধব?      

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: ৭ নভেম্বর, ২০২৩-এর মধ্যে এই নীতিমালার ওপর মতামত দিতে বলা হয়েছিল। নীতিমালা পুঁজিবাজারবান্ধব হবে বলেই নীতিমালার প্রণয়ন করা হয়। এই নীতিমালা যিনি Formulate করেন তার একটি দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, যাদের ওপর এটি প্রযোজ্য হবে, তাদের একটি দৃষ্টিভঙ্গি থাকে এবং বাজার Intermediary বলতে স্টক এক্সচেঞ্জকে বোঝাব তাদের একটি দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। Win-Win Situation -এ যদি নীতিমালা করা হয়, তাহলে সবার জন্য এটা ব্যবসাবান্ধব হবে। আর যদি একপক্ষীয়ভাবে  রেগুলেটর এটা চাচ্ছে বলে করে দেয়া হয়, তাহলে এটা কাক্সিক্ষত ফল দেবে না। আমাদের দেশে নিয়ম-কানুন, রিপোর্ট তুলনা করলে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে অনেক গ্যাপ আছে। আমরা একবারে ওই গ্যাপ মেটাতে পারব না। আমাদের উবভরপরবহপু যেগুলো আছে রেগুলেটরি আইন-কানুন বা জঁষবং-এর ব্যাপারে একবারে অর্জন করতে আমরা পারব না। এগুলোকে পর্যায়ক্রমে করতে হবে। একবার আইন হয়েছে ২০ বছর পর আমরা রিভিউয়ের জন্য এনেছি। এতদিন কেন আমরা অপেক্ষা করলাম? এর অনেকগুলো নীতিমালার প্রণয়ন এখন পর্যন্ত হয়ে যাওয়া দরকার ছিল। এখন অনেকগুলো নীতিমালা একসঙ্গে আনার ফলে একটা বিশাল ধাক্কা পড়বে বলে মনে হয়। এটাকে পরিবর্তন করতে হবে এবং পরিবর্তন করার জন্য স্টাডি করতে হবে, এর জন্য সময় লাগবে। এই বিধিমালা যেভাবে আসছে, সেভাবে পরিপালন করা যাবে না। এটাতে বেশকিছু পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে ক্যাপিটালের ক্ষেত্রে যে Requirement দেয়া হয়েছে এটা পালন করতে হলে ৫০% ব্রোকারেজ হাউজ নন কমপ্লায়েন্সে পড়ে যাবে, অর্থাৎ ব্রোকারেজ হাউসগুলো ট্রেড করতে পারবে না। এটা কারও কাম্য নয়, যাদের হাত ধরে পুঁজিবাজার এই পর্যায়ে এসেছে, এখন বলা হচ্ছে তাদের ক্যাপিটাল কম, ‘ÔYou are Not Eligible for BusinessÕ.. এটা অমানবিক আচরণ। কেউ ক্যাপিটাল বাড়াতে চাইলে ঞধী চধরফ টাকা লাগবে। আমরা নতুন বিধিমালাকে স্বাগতম জানাই, সে বিধিমালা প্রয়োগ যোগ্য হতে হবে। আমরা এটাকে ধরে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তুলনা করে তাড়াহুডো করে চাপিয়ে দিলে রুগণ ব্রোকারেজ হাউসগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

শেয়ার বিজ: ব্রোকারদের পরিশোধিত মূলধন বাড়ালে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা কতটুকু বাড়বে

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: পরিশোধিত মূলধন বাড়ালে বিনিয়োগকারী সুরক্ষা পাবে এটা বলা যায় না। কারণ ব্রোকাররা বিনিয়োগকারীদের টাকা ব্যবহার করে না। বিনিয়োগকারীদের টাকা ব্যবহার করলে এটা পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে সুরক্ষা দেয়া যাবে না। কারণ কারও পরিশোধিত মূলধন যদি বেশি থাকে, সেটা বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচ করে ফেলে। কারও পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো মানে এই নয় যে, টাকাটা ব্যাংকে ডিপোজিট করে রাখবে আর বিনিয়োগকারীদের টাকা ব্যবহার করলে ডিপোজিট থেকে পরিশোধ করবে। যেটা দরকার সেটা হচ্ছে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আইনি সক্ষমতা, আর্থিক সক্ষমতা, ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা, পুঁজিবাজারের জ্ঞান সক্ষমতা ইত্যাদি বাড়ানো। এগুলো যদি বাড়াতে পারে সেটাতে ব্রোকার, বিনিয়োগকারী সবার সুরক্ষা বাড়বে। শুধু বিনিয়োগকারী সুরক্ষা পাবে এটা গল্পের মতো, এটা হয় না। পুঁজিবাজারে যারা বিনিয়োগকারীদের CCBA -এর টাকা অপব্যবহার করে তাদের বড় শাস্তি দেয়া উচিত, যাতে অন্য কেউ এটা করার সাহস না করে। এই ব্যাপারে যৌক্তিক মনিটরিং বাড়াতে হবে।

শেয়ার বিজ: বর্তমানে বেশিরভাগ কোম্পানিকে জুন এবং অল্প কিছু সংখ্যক কোম্পানিকে ডিসেম্বর তাদের অর্থবছর সমাপ্ত করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বর্তমান পুঁজিবাজারে কতটুকু উপকৃত হয়েছে?    

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: আমি জানি না, এটা কেন করা হয়েছে। এটাতে নানা রকমের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এর একটি হচ্ছে যে, বেশিরভাগ কোম্পানি এই সিদ্ধান্তের ফলে জুনে অর্থবছর শেষ করছে। জুনে অর্থবছর শেষ হওয়ার ফলে সব কোম্পানিকে একসঙ্গে অডিট সম্পন্ন করতে হয়েছে। কিন্তু এতগুলো অডিট ফার্ম নেই। এজিএম করতে হচ্ছে কিন্তু এতগুলো ভালো ভেন্যু পাওয়া যায় না। অনলাইনে এজিএমের অনুমতি থাকায় ভেন্যু সমস্যা আপাতত তেমন প্রকট হয়ে দাঁড়ায়নি। আর সব থেকে যেটা বলা হয় ‘পুঁজিবাজারে তথ্যই অর্থ’ এই তথ্যের প্রবাহটা সংযোগ হয়ে গেছে।  জুন ও ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের ফলে সকল প্রতিষ্ঠানকে একই মাসে এজিএম করতে হচ্ছে। সবার প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় প্রান্তিক ও বার্ষিক প্রতিবেদন প্রায় একই সময়ে প্রকাশিত হয়। এর মাঝের সময়টা পুঁজিবাজার তথ্যহীন হয়ে থাকে। যেমন যাদের জুনে অর্থবছর শেষ হয় তাদের তৃতীয় প্রান্তিক শেষ হয় মার্চ মাসে। এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এদের ৩য় প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ৪র্থ প্রান্তিক/বার্ষিক রিপোর্ট আসার জন্য আগস্ট মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। কোনো ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এর মাঝে প্রায় ৪ মাস পুঁজিবাজারে কোনো তথ্যই আসে না। অর্থবছর যদি কারও মার্চ, কারও এপ্রিল, কারও মে বা অক্টোবর/নভেম্বরে শেষ হয় তাহলে আমরা সারা বছরই কোনো না কোনো কোম্পানির তথ্য পেতাম। এখন একসঙ্গে অনেকগুলো কোম্পানির অর্থবছর শেষ হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের জন্য অসুবিধাই হচ্ছে বলা যায়। ডিসেম্বরে প্রায় ৪০-৫০টি কোম্পানির এজিএম আছে, যেটা সর্বমোট কোম্পানির ২০%-৩০%। আমার মনে হয় এই আইনটি করা ঠিক হয়নি, এর পরিবর্তন করা প্রয়োজন। পরিবর্তন দুইভাবে করা যায়, এক নতুন যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসে তাদের স্বাধীনমত অর্থবছর শেষ করার সুযোগ দেয়া, দ্বিতীয়ত বাকিদের এজিএম করার জন্য বছরের বিভিন্ন সময় নির্ধারণ করে দেয়া।

শেয়ার বিজ: পুঁজিবাজারে লিস্টেটেড কোম্পানিতে একজন অডিটর তিন বছর ধরে কাজ করতে পারে। যারা আগামীতে পুঁজিবাজারে আসবেন তারা কি এই প্র্যাকটিশ এখন থেকেই পালন করা উচিত? শোনা যাচ্ছে ডিএসই একজন অডিটর ৩৬ বছর ধরে করছেন, এই ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: এক্সটারনাল অডিটের দুটি দিক আছে : একটি হচ্ছে আইনের পরিপালন এবং অন্যটি হচ্ছে তৃতীয় পক্ষের দ্বারা Independent Opinion Regarding Organizational Performance, Regulatory Compliance Weakness, Opportunities, Loss ইত্যাদি বিষয়ে অবগত হওয়া। অডিটররা সাধারণত ম্যানেজমেন্ট যে রিপোর্ট দিয়ে থাকে সেটার মধ্যে এসব জিনিসগুলো উল্লেখ থাকে। সে দিক থেকে চিন্তা করলে নিজেদের স্বার্থে বা অর্গানাইজেশনের ইফেকটিভনেস জানার জন্য তিন বছর পর পর অডিটর পরিবর্তন করা উচিত। শুধু পরিবর্তন করলেই হবে না, ভালো অডিটর লাগবে। আমাদের দেশে আমি যেটা মনে করি, বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অডিট করার জন্য যে অডিট ফি দেয় সেটা অত্যন্ত কম। এত কম অডিট ফি দিয়ে আমরা ভালো অডিট ফার্ম দিয়ে অডিট করতে পারি না, শুধু নিয়ম পালনই হয়। এই মূল্যবোধ থেকে উঠে এসে অডিট নিয়োগ ও পরিবর্তন করা যেতে পারে।

শেয়ার বিজ: অনেক বিশেষজ্ঞরা বলেন ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেয়ার জন্য, আপনি কি এর পক্ষে?  

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: ফ্লোর প্রাইসকে যদি তুলনা করি, মার্কেটে যখন নানা কারণে ইনফরমেশন ফ্লোটা পরিবর্তন হয় বা বাধাগ্রস্ত হয়, একেক জনের কাছে একেক রকম ইনফরমেশন পৌঁছাতে থাকে বা নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকায় শেয়ার মার্কেটে শক সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এরকম অনুমান করেই স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয়েছিল। এরপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, এখন আরও অনেক কিছু যোগ হয়েছে, যার ফলে এটা দীর্ঘায়িত হয়েছে। দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে পুঁজিবাজারে যে তারল্য ছিল অর্থাৎ আমি চাইলেই শেয়ার কিনতে পারব বা বিক্রি করতে পারব, এই যে একটা সৌন্দর্য বা প্রয়োজনীয় প্রাপ্তি থাকার কথা সেটা ব্যাহত হয়েছে। সে জন্য আমি মনে করি পর্যায়ক্রমে ফ্লোর প্রাইসটা তুলে দেয়া উচিত। পর্যায়ক্রমে বলতে যে ভালো কোম্পানিগুলো আছে এগুলোর ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া যেতে পারে। যখন করপোরেট ডিসক্লোজার হওয়ার পর যেদিন সার্কিট ব্রেকার থাকে না ওইসব  কোম্পানিগুলোকে আর ফ্লোর প্রাইস না দেয়া, এভাবে পর্যায়ক্রমে ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া যেতে পারে। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হলে যে খারাপ কোম্পানিগুলোর দাম বৃদ্ধি হয়েছে এগুলোর শেয়ারের দাম কমে যাবে। কমে গেলে করার কিছুই নেই। বর্তমানে মার্কেট ইন-লিকুইড হয়ে গেছে, অনেক শেয়ার বিনিয়োগকারীরা চাইলেও বিক্রি করতে পারছে না। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়া হবে এই ভয়ে ক্রেতারা শেয়ার ক্রয় করছে না। ইঝঊঈ একটা ভালো কথা বলেছিল যে ফ্লোর প্রাইস এখনই উঠবে না। এটা ভালো কথা কিন্তু বর্তমানে সময় হয়েছে এই বিষয়ে চিন্তা করা এবং এটাকে আস্তে আস্তে তুলে দেয়া।

শেয়ার বিজ: এসএমই প্ল্যাটফর্মে বড় মূলধনি কোম্পানি অবস্থান করছে। এই ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?       

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: আমার দৃষ্টিতে এসএমই এসএমই মার্কেট একটা পরীক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম। পরীক্ষামূলক হলে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে পরবর্তীতে ডিরেক্টিভস দেয়া হয়। প্রথমে যেটা হয়েছিল, যেসব কোম্পানি এসএমই বোর্ডের পেইড-আপ ক্যাপিটাল এসএমই বোর্ডের র‌্যাংকের বাইরে চলে গেছে তাদের মেইন বোর্ডে আসার জন্য বলা হয়েছিল। মেইন বোর্ডে আসার জন্য তাদের অন্য দিকগুলো পালন করেছে কি না বা পালন করার চেষ্টা করছে কি না সেটা দেখা উচিত। শুধু পেইড-আপ বেড়ে ৩০ কোটি টাকার বেশি হয়ে গেছে। এজন্য তাদের মেইড বোর্ডে আনতে হবে এর কোনো অর্থ হয় না। আমি যেটা সাজেস্ট করব এমএমই বোর্ডে যেসব কোম্পানিগুলো আছে তাদের একটি প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন করা। এর ফলে এমএমই বোর্ডের কোম্পানিগুলো ভালো করছে, নাকি খারাপ করছে সেটা বোঝা যাবে। শর্তসাপেক্ষে অনেক কোম্পানিগুলোকে সজন্য এমএমই বোর্ডে আসার অনুমতি দেয়া হয়েছে। যাদের পরিশোধিত মূলধন বেড়েছে এবং পারফরমেন্সে ভালো হয়, তাহলে এদের এমএমই বোর্ডে আসার জন্য অনুমতি দেয়া উচিত। একবার এমএমই বোর্ডে ঢুকছে, এরপর আর কোনো পরিবর্তন নেই তাহলে এমএমই বোর্ডে আসার ও থাকার ব্যাপারে স্থবিরতা তৈরি করবে। সেজন্য এমএমই বোর্ডে যারা ভালো করছে তাদের মূল পরিচালনা পর্ষদে নিয়ে আসা উচিত। সময়ের প্রেক্ষিতে নয়; বরং পারফরমেন্সের প্রেক্ষিতে মেইন বোর্ডে আসার জন্য অনুমতি দেয়া যেতে পারে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০