হাসানুজ্জামান পিয়াস: রোববার থেকে পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করার পর থেকে ইতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন হতে দেখা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারে গতকালও বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার প্রবণতা বেড়েছে। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা কস্ট প্রাইস বা খরচ মূল্যে হিসাব করার সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার এমন এক সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হয়। আর এমন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার ব্যাংক খাতের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। একইসঙ্গে আগের দিনের চেয়ে চার শতাংশের বেশি বেড়ে মোট লেনদেনের প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ ছিল ব্যাংক খাতের দখলে।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের মোট ৩৩টি কোম্পানির মধ্যে ২৫টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। অন্যদিকে একটি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে এবং বাকি সাতটি কোম্পানির শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে এ খাতের কোম্পানির মধ্যে দর বৃদ্ধির তালিকায় উঠে আসা আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংকের ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ, এবি ব্যাংকের প্রায় ছয় শতাংশ, রূপালী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকের চার দশমিক ৮৫ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তিন দশমিক ৯২ শতাংশ, সিটি ব্যাংকের তিন দশমিক ৫৯ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকের তিন দশমিক ১৬ শতাংশ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রায় তিন শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকের দুই দশমিক ৫৩ শতাংশ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের দুই দশমিক শূন্য চার শতাংশ, ব্র্যাক ব্যাংকের এক দশমিক ২৭ শতাংশ, এনআরবিসি ব্যাংকের এক দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংকের এক দশমিক ৪৫ শতাংশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এক দশমিক ৪১ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংকের এক দশমিক ২৪ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংকের এক দশমিক ৮৫ শতাংশ, এসবিএসি ব্যাংকের তিন দশমিক ৬৭ শতাংশ, যমুনা ব্যাংকের শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের এক দশমিত ৪৮ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের এক দশমিক শূন্য তিন শতাংশ, এনসিসি ব্যাংকের শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দুই দশমিক ৪০ শতাংশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এক দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং পূবালী ব্যাংকের এক দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের উপসচিব মো. জেহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত ব্যাংকের বিনিয়োগ কস্ট প্রাইসে হিসাব করার সম্মতি দিয়ে একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯৯’-এর ২৬ক ধারায় ব্যাংক কোম্পানি কর্তৃক অন্য কোন কোম্পানির শেয়ার ধারণের হিসাবায়নে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা (এক্সপোজার লিমিট) নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক ক্রয়কৃত মূল্যকেই ‘বাজারমূল্য’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক কস্ট প্রাইসে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চেয়ে একটি চিঠি পাঠায়। সেই চিঠির জবাবে অর্থ মন্ত্রণালয় এই সম্মতিপত্র পাঠিয়েছে। এর ফলে পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত এই ইস্যুর সমাধান হলো।
উল্লেখ্য, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা গণনা করা হয় ক্রয়মূল্য অথবা বাজারমূল্যের মধ্যে যেটি বেশি, সেটি ধরে। এই পদ্ধতিকে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখা হয়। কোনো ব্যাংক তার বিনিয়োগসীমার মধ্যে শেয়ার কিনলে সেটির দর বেড়ে গিয়ে সীমা অতিক্রম করে গেলেই তা বিক্রি করে দিতে হয়।
মূলত এ সংবাদ প্রকাশের জেরে গতকাল ব্যাংক খাতের কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।