ইসমাইল আলী: পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ। ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুই ইউনিটের কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এ কেন্দ্রটির জন্য গত অর্থবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে। যদিও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন না হওয়ায় গত অর্থবছর সক্ষমতার অর্ধেকও ব্যবহার হয়নি কেন্দ্রটির। বাধ্য হয়েই একটি ইউনিট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে গত অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় অর্ধেক বা হাজার কোটি টাকাই গচ্চা গেছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতার ৮০ শতাংশ (প্লান্ট ফ্যাক্টর) ব্যবহার করা হবে ধরে নিয়ে লাইসেন্স দেয়া হয়। এ সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হলে বছরে প্রায় ৭০০ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। তবে গত অর্থবছর থেকে এ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ৩৮১ কোটি ১৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ সক্ষমতার ৪৫ শতাংশ ব্যবহার হয়।
কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে তিন হাজার ৩৭৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৯৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম পড়ে আট টাকা ৮৬ পয়সা। তবে সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হলে এ ব্যয় ছয় টাকার নিচে নেমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, পায়রা কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটির জন্য বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ করছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। তবে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ হতে আরও এক বছর লাগতে পারে। ফলে এই কেন্দ্র থেকে পুরো বিদ্যুৎ কেনা ছাড়াই আরও এক বছর হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হবে পিডিবিকে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ শেয়ার বিজকে বলেন, পিজিসিবির ব্যর্থতার কারণেই সময়মতো পায়রার পুরো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে আসছে না। বারবার তাগাদা দেয়ার পরও তারা সফল হয়নি।
এ প্রসঙ্গের পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, পায়রার পুরো বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে তেলচালিত কেন্দ্রের বিদ্যুৎ কম কিনতে হত। এতে লোকসান কমত।
প্রসঙ্গত, পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীনের সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে তোলা এ কেন্দ্রটি থেকে ২২ বছর বিদ্যুৎ কেনা হবে। মাত্র ২১ মাসে কেন্দ্রটি নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। গত বছর মে মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ও আগস্টে দ্বিতীয় ইউনিটটি উৎপাদন শুরু করে।
এদিকে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে সঞ্চালন লাইনে নির্মাণে তিনটি প্রকল্প নিয়েছে পিজিসিবি। তবে করোনা মহামারি ও পদ্মা নদীসহ কয়েকটি রিভার ক্রসিং (নদীর ওপর দিয়ে লাইন নির্মাণ) জটিলতার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি সময় লাগছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, কভিড মহামারির কারণে বিদেশ থেকে প্রকৌশলী আসতে ও মালপত্র ক্রয়ে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া এই রুটে লাইন নির্মাণে পদ্মাসহ অসংখ্য বড় নদী রয়েছে। রিভার ক্রসিং একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এরপরও আগামী জানুয়ারির মধ্যে পিজিসিবির কাজ শেষ হবে। আর পদ্মা রিভার ক্রসিংয়ের কাজ আগামী জুনের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে পায়রা কেন্দ্রটির পুরো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যাবে বলে আশা করা যায়।