রহমত রহমান: কর প্রদান ও সেবা নিতে গিয়ে কর অঞ্চলে হয়রানির শিকার হয়েছেন বা হচ্ছে। দিতে হয়েছে ঘুষ। অন্যায়ভাবে আপনার ওপর ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। অথবা ভ্যাট রিটার্ন দাখিল ও ভ্যাট প্রদানে ভ্যাট কমিশনারেটে হয়রানির শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন। দিতে হয়েছে ঘুষ। আবার কাস্টম হাউসে আমদানি-রপ্তানি করতে গিয়ে বা সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন। চিন্তা না করেই এক ক্লিকেই অভিযোগ করে ফেলুন। জিআরএস ওয়েবসাইটে গিয়ে ঘুষ, দুর্নীতি, হয়রানিসহ যে কোনো অভিযোগ করে ফেলুন। আপনার অভিযোগ সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে। অভিযোগের গতি প্রকৃতি আপনার মোবাইলে জানানো হচ্ছে। নিজের নাম দিয়ে বা অজ্ঞাতনামা হিসেবেও অভিযোগ করতে পারেন। সঙ্গে হয়রানি, ঘুষ, দুর্নীতির প্রমাণাদিও দিতে পারেন। তাই জিআরএস সিস্টেমে রাজস্ব-সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ, মতামত দিতে করদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। শুধু এনবিআর নয়, জিআরএস সিস্টেম ব্যবহার করে আপনি যেকোনো দপ্তরে অভিযোগ দিতে পারেন।
জিআরএস পদ্ধতি কি: অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাকে সংক্ষেপে জিআরএস বলে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণের একটি প্ল্যাটফর্ম। জিআরএস ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি দপ্তরে দেশের একজন নাগরিক যে কোনো সেবার বিরুদ্ধে তার অসন্তোষ বা ক্ষোভ জানিয়ে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। অভিযোগকারী নাগরিককে তার অভিযোগের বিষয়ে যেকোনো ধরনের অগ্রগতি বা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করা এবং কোনো বিষয়ে তার মূল্যবান মতামত বা পরামর্শ মূল্যায়ন করাও এই ব্যবস্থার অন্যতম।
নিবন্ধন করবেন কীভাবে: জিআরএস মূলত একটি স্বতন্ত্র ওয়েবপোর্টাল (যঃঃঢ়ং://মৎং.মড়া.নফ/)। একজন নাগরিক প্রথমে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে নিবন্ধন করে পারেন। নিবন্ধন করতে নিজ নামে নিবন্ধন করা একটি মোবাইল নম্বর, নাম, জš§ তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ই-মেইল, ঠিকানা দিতে হবে। নিবন্ধনের পর মোবাইল ও ই-মেইলে একটি পিনকোড যাবে। ওই পিনকোড-ই আপনার পাসওয়ার্ড। নতুন করে লগইন করতে হলে মোবাইল নম্বর ও পিনকোড দিতে হবে। পিনকোড চাইলে পরে আপনি পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।
অভিযোগ জানাবেন কিভাবে :
জিআরএস ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি লগইন করে অভিযোগ জানাতে পারেন। অথবা আপনি ‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবেও অভিযোগ, মতামত জানাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ‘নাগরিক অভিযোগ দাখিল ফরমে’ গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনার মোবাইল নম্বর, নাম, ই-মেইল আইডি দিতে হবে। সেই ফরমে সাধারণ এবং সামাজিক সুরক্ষা ভাতাÑএই দুটির যেকোন একটি সিলেক্ট করতে হবে। যে দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তা সিলেক্ট করতে হবে। অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করতে হবে। অভিযোগের বিবরণ দিতে হবে। সঙ্গে অভিযোগের প্রমাণাদি সংযুক্ত (১০ মেগাবাইট সাইজের ছবি, পিডিএফ ফাইল বা ওয়ার্ড ফাইল) করতে পারবেন।
আপনার দেয়া অভিযোগের সর্বশেষ অবস্থা ও কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছেÑতা কিভাবে জানবেন
একজন নাগরিক অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধান ও ফোকাল পয়েন্টের কাছে চলে যাবে। যদি অভিযোগ ওই দপ্তরের হয়Ñতাহলে অভিযোগ ফাইলে তোলা হবে। যে ধরনের অভিযোগÑসেই অফিস বা শাখায় পাঠানো হবে। সঙ্গে দ্রুত অভিযোগের প্রতিকার বিষয়ে ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জানাতে নির্দেশনা দেয়া হবে। আপনি অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার অভিযোগের একটি ‘ট্র্যাকিং’ নম্বর পড়বে। অভিযোগের কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, সর্বশেষ অবস্থা আপনার মোবাইলে ট্র্যাকিং নম্বর অনুযায়ী চলে আসবে। এছাড়া আপনার অভিযোগের কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছেÑতাও আপনাকে জানানো হবে। প্রয়োজন হলে আপনাকে ডাকা হবে। আর যদি অজ্ঞাতনামা অভিযোগ হয়Ñ তাহলে অভিযোগ সঠিক হলে তার ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা প্রতিমাসে কি ধরনের অভিযোগ এসেছে, কোন অভিযোগের কি অবস্থা, কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছেÑতা উল্লেখ করে দপ্তর প্রধানকে প্রতিবেদন দেবেন। সঙ্গে ওই দপ্তরের ওয়েবসাইটেও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
জিআরএস সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যান যা বলেছেন সম্প্রতি করদাতাদের হয়রানি, দুর্নীতি ও ঘুষ প্রতিরোধ কীভাবে করবেনÑনতুন চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানকে প্রশ্ন করা হয়েছে। উত্তরে তিনি শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন, ‘আমাদের করদাতাদের প্রচুর অভিযোগ রয়েছেÑ তারা সব আমাদের কাছে জানাতে পারেন না। আমাদের সুন্দর একটি জিআরএস (গ্রিভেন্স রিড্রেস সিস্টেম) পদ্ধতি রয়েছে। সম্পূর্ণ অটোমেটেড এই পদ্ধতি। করদাতা ও ব্যবসায়ীদের অ্যাসোসিয়েশন এটা সম্পর্কে জানেন না। জিআরএস সিস্টেমে কোনো করদাতা বা ব্যক্তি অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গেÑসেই অভিযোগ সরাসরি অনলাইনে আমার কাছে চলে আসবে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওই অভিযোগকে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করব। যদি বড় ধরনের অভিযোগ থাকেÑসেগুলো যাচাই-বাচাই করে যদি প্রমাণিত হয়Ñতাহলে যারা এই কাজগুলো করবেন, তাদের আমরা বিচারের আওতায় নিয়ে আসব। অত্যন্ত কঠিন বিধি বিধান আমরা প্রয়োগ করব।’
চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি সব চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশন, বিজনেস কমিউনিটিকে বলবÑআমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ যদি অপেশাদার আচরণ করেনÑআপনারা জিআরএস সিস্টেমে আমাদেরকে আপনাদের অভিযোগ জানান। আমি ট্যাক্সপেয়ার ও বিজনেস কমিউনিটিকে বলবÑআপনাদের কমপ্লেইন আমাদের জানান। আমরা কুইক অ্যাকশন নেব। আমরা যদি ন্যূনতম প্রমাণ পাইÑআমরা সে ব্যাপারে ক্লিয়ার অ্যাকশন নেব। তাহলে তা কমে যাবে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি এবং জিআরএস সিস্টেম দেখিয়ে দিয়েছি। আপনারা আমার কাছে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে আপনাদের মতামত, অভিজ্ঞতা, অভিযোগ, ভোগান্তিÑআমাদের অফিসাররা কি ধরনের ডিলিং করেনÑসেই ধরনের তথ্য প্রমাণসহ আমার কাছে জানাতে পারেন। আমি কুইক অ্যাকশন নেব। আমার পক্ষ থেকে এটাই আমার শুদ্ধি অভিযান।’
জিআরএসের এনবিআরের ফোকাল পয়েন্ট ও প্রথম সচিব (বোর্ড প্রশাসন) মো. গাউছুল আযম শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন, একেবারে সহজে যে কেউ জিআরএস পদ্ধতিতে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অভিযোগের ধরন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শাখা, কর, ভ্যাট বা কাস্টমস অফিসে প্রেরণ করি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছেÑতা জানাতে নির্দেশনা দিই। আবার অভিযোগ গুরুতর হলে সেভাবে ফাইল করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়।
এনবিআরে অভিযোগ সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ সব সময় আসে। তবে প্রচার বেশি হলে অভিযোগ বেশি আসবে। আমরা চাই যেকোনো নাগরিক হয়রানি, ঘুষ, দুর্নীতি বা যেকোনো হয়রানির শিকার হলে তিনি যেন জিআরএস সিস্টেমে অভিযোগ করেন।