Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:37 pm

এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে ভাঙ্গা থেকে যশোর গেল ট্রায়াল ট্রেন

প্রতিনিধি, যশোর নড়াইল: পদ্মা সেতু রেলসংযোগের আওতায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়া স্টেশন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল ‘ট্রায়াল রান’ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ভাঙ্গা থেকে ছাড়া ট্রেনটি সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে যশোরের রূপদিয়া রেলস্টেশনে পৌঁছে। ট্রেনটি প্রায় ১০ মিনিট স্টেশনে অবস্থান করে আবার ভাঙ্গার উদ্দেশে রওনা হয়। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ভাঙ্গা-যশোর প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সম্পন্ন হলো। একই রুটে রোববারও চলবে পরীক্ষামূলক ট্রেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুন নাগাদ এ পথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে আশাবাদী তারা।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ’ (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ ওই রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী এবং যশোরের পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়াতে রেলওয়ে জংশন থাকছে। এ ছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল ও যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়াতে রেলস্টেশন হয়েছে। কাজের অংশ হিসেবে শনিবার ও রোববার দুদিন ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত বিভিন্ন গতিতে ট্রেন চালিয়ে নির্মাণ অবস্থা পরীক্ষা করা হবে।

ট্রায়ালে অংশ নেয়া রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের ৮৭ দশমিক ৩২ কিলোমিটার পথ ৮৪ কিলোমিটার বেগে পাড়ি দিয়েছেন তারা। পথে কোথাও কোনো সমস্যার সম্মুখীন হননি তারা। আশা করা যাচ্ছে, এ রুটে আগামী জুনের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

এদিকে পদ্মা রেল সেতু হয়ে নতুন ট্রেন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা। তাদের দাবি, এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রমতে, এ প্রকল্প শেষের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ নামে এটির অনুমোদন হয়। এই প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।

পরীক্ষামূলক ট্রেনের চালক আব্দুল মান্নান বলেন, সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে আমরা ভাঙ্গা ছেড়ে আসি। সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে যশোরের রূপদিয়া স্টেশনে পৌঁছেছি।

যশোর রেলস্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, এই ট্রেন যশোরবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার। ট্রেনটি ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে যশোরে আসে। যাওয়ার সময় আরও বেশি বেগে যাবে। আগামী জুন মাস নাগাদ এই রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।

এদিকে নড়াইলের ওপর দিয়ে রেলের উচ্চগতিসম্পন্ন ট্রায়াল দেখতে ভিড় জমান নড়াইল পৌর এলাকার দুর্গাপুর, ভওয়াখালী, বরাশুলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। রেললাইনের কাজ দেখতে আসা ফরিদপুর জেলার রহিমা বেগম বলেন, আমার বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। শুনলাম এই রেলপথ দিয়ে নাকি কলকাতাসহ ভারত ও অনান্য দেশে যাওয়া যাবে, তাই খুব ভালো লাগছে।

দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক খাজা মিয়া বলেন, রেললাইন আগে বাড়ির কাছে হয়েছে। আগে এ গ্রামে বাইরের মানুষের তেমন আনাগোনা ছিল না। এখন অনেক মানুষ দেখা যায়, যা বেশ ভালো লাগে।

ডুমুরতলা গ্রামের সাবিক মোল্লা বলেন, শুনলাম আজকে বড় ট্রেন আসবে। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে চলবে এবং জুন মাস থেকে আমরা ট্রেনে চলতে পারব, যেজন্য বেশ উচ্ছ্বসিত লাগছে নিজের কাছে।

মো. আল আমিন গাজী বলেন, উচ্চগতিসম্পন্ন রেলের চাকা পড়েছে নড়াইলের মাটিতে। এতে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। ১৬২ বছর পর নড়াইলের মানুষ নিজ এলাকা থেকে রেলগাড়িতে চড়ে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবে।