তুহিন ইসলাম, মেহেরপুর : এক জমিতে চার ফসল চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন মেহেরপুরের কৃষক স্বপন আলী। দুবছর আগে দুই ফসল, পরের বছর তিন ফসল আবাদ করে লাভবান হওয়ায় এ বছর তিনি একসঙ্গে চার ফসলের আবাদ করেছেন। তার জমিতে এখন হলুদ, ওল, মুখিকচু ও মরিচের গাছ একই সঙ্গে বেড়ে উঠছে। ভালো লাভের আশা করছেন চাষি।
পরিবারে অসচ্ছলতার কারণে বেশি লেখাপড়া করা হয়নি মেহেরপুর সদর উপজেলার কোলা গ্রামের স্বপন আলীর। ২০ বছর আগে মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। সেই টাকা থেকে কিনেছেন অর্ধ কোটি টাকার সম্পদ। আর এক জমিতে চার ফসল চাষ করে সাড়া ফেলেছেন পুরো জেলায়। অন্যের ১৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে দুবছর আগে একই জমিতে আদার সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে মরিচের আবাদ করেন। এই আবাদে লাভবান হওয়ায় পরের বছর এক বিঘা জমিতে দুই ফসলের সঙ্গে যোগ করেন ওলকচু। এখানেও তিনি লাভবান হওয়ায় এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে তিনি তিন ফসলের মধ্যে মুখিকচু যোগ করে চার ফসল আবাদ করেছেন। তার জমিতে এখন হলুদ, মরিচ, ওলকচু ও মুখিকচুর গাছ একই সঙ্গে বেড়ে উঠছে। চাষি স্বপন জানান, একই খরচে তার চার ফসল উৎপাদন হচ্ছে। বিঘাপ্রতি সার ও জমির বর্গা বাবদ ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি আশা করছি, বিঘাপ্রতি এক লাখ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকার মতো হওয়ার আশা করছি। একসঙ্গে চার ফসল করার সুবিধা হলো এর মধ্যে কোনো ফসলে লোকসান হলে অন্য ফসল থেকে তা পুষিয়ে নেয়া যায়। উৎপাদনও ভালো পাওয়া যায়।
একই জমিতে যে একই সঙ্গে চার আবাদ করা যায়, তা দেখে আশ্চর্য হয়েছেন অনেকেই, শামসের আলী নামের এক চাষি জানান, আমার বিশ্বাসই হতো না যে এক জমিতে চার ফসল, আমি দেখে তো হতবাক। আমিও আশা করছি সামনে বার এই আবাদ করব। আর একজন চাষি আহমদ আলী বলেন, একই সময়ে একই জমিতে চার ফসল হচ্ছে, এটা দেখে আমার খুব ভালো লাগছে, স্বপন ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে সামনের বার আমিও জমিতে চার ফসলের আবাদ করব।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কৃষি অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, চাষি স্বপনের মতো এভাবে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করলে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি থেকে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব, যেটা প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া। তাছাড়া একটাতে লোকসান হলে অন্যটি থেকে পুষিয়ে নেয়া যায়। ফলে চাষির লোকসান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি আরও জানান, মেহেরপুর এলাকার মাটি খুব উর্বর, তাই এই মাটিকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করার জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
