Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:06 am

এক টুকরো নেত্রকোনা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে যেতেই দেখা মিলল বৃত্তাকার হয়ে বসা একদল মানুষের আড্ডা। গোল হয়ে বসে থাকা মানুষগুলোর কথা শুনে বোঝার বাকি রইল না যে এরা নেত্রকোনাবাসী। আড্ডা জমেছে বেশ। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে কেউ কথা বলেন, বাকিরা হাসেন। হাসার রহস্য আর কিছুই নয়, নেত্রকোনার আঞ্চলিক ভাষা।

নেত্রকোনা থেকে রাজশাহীর দূরত্ব প্রায় ৩২০ কিলোমিটার। এত দূরে নেত্রকোনার লোকজনের খুব কম আসা হয়। তবু যারা আসে হয় তারা পড়াশোনার তাগিদে, নয়তো চাকরির সুবাদে আসে। স্বাভাবিকভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের অন্য জেলার মতো নেত্রকোনা থেকেও শিক্ষার্থীরা জ্ঞান আহরণ করতে আসে। তবে সংখ্যাটা অতি নগণ্য। এই নগণ্য সংখ্যাটাকে একটি জায়গায় এক করতে কাজ করে যাচ্ছে ‘নেত্রকোনা জেলা সমিতি নামে’ একটি সংগঠন। প্রতিবছর নেত্রকোনা থেকে আসা নতুন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিভাগ থেকে খুঁজে বের করা হয়। পুরোনোদের সঙ্গে নতুন নেত্রবাসীদের সাক্ষাৎ যেন অনেক দিন পর বাড়িতে অতিথি আসার মতোই রোমাঞ্চকর।

নেত্রকোনা জেলা সমিতির পথচলা এবার যতটাই মসৃণ, আগে ততোটাই ছিল দুষ্কর। নিজ জেলার ছেলেমেয়েদের এক সঙ্গে দেখতে পেরে অনেক পুরাতন শিক্ষার্থী আবেগে আপ্লুত। সবার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যার সমাধান করা সহজ হয়ে যায়। ক্যাম্পাসে একসঙ্গে পথচলা সহজ হয়ে যায়। নিজেদের মধ্যে বন্ধন আরও অটুট হওয়ার পাশাপাশি নিজ জেলার উন্নয়নের জন্য নানা রকম চিন্তাভাবনা কাজ করে সংগঠনটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে। একসঙ্গে বসার পর যেন মনে হয় ক্ষণিকের জন্য হলেও তারা জায়গাটিকে এক টুকরো নেত্রকোনা বানিয়ে নিয়েছে। জেলার ভাষা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি যেন সব শিক্ষার্থীর মনে দোলা দেয়।

নেত্রকোনা জেলা সমিতির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সত্য নারায়ণ সরকার বলেন, এখন আমরা অনেক নেত্রকোনাবাসী এক হতে পারি, দুই বছর আগে এটি ছিল কল্পানাতীত। কেননা তখন সবাই বিচ্ছিন্ন ছিল। নেত্রকোনার অনেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও কেউ কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন না। এর কারণ ছিল তখন জেলা সমিতি এখনকার মতো এতোটা সক্রিয় ছিল না, এত শিক্ষার্থীও ছিল না।

সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী মানিক হাসান রাব্বি বলেন, আমাদের জেলা সমিতির বর্তমান সদস্যদের বিরাট অংশই বলে দেয় নেত্রকোনার ছেলেমেয়েরা শিক্ষাক্ষেত্রে নানা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠে ভর্তি হয়েছেন এইসব শিক্ষার্থীরা। তাদের একটাই চাওয়াÑতাদের মাধ্যমে নেত্রকোনা যেমন আলোকিত হবে, তেমনি যেন আলোকিত হয় গোটা বাংলাদেশ। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা হাওর-বাঁওড়, পাহাড়ের অঞ্চল থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূরে জ্ঞানের অন্বেষণে আসা ছেলেমেয়েগুলো যেন স্বপ্নের পাঠশালায় পড়তে এসেছে। এ আড্ডা যেন পড়ার ফাঁকে পাড়ার সাথীদের সঙ্গে বিকেলে একটু মন প্রফুল্ল করার সময়। হাসি, আড্ডা আর তামাশায় তারা রাবির ক্যাম্পাসে জানান দেয় আমরা স্বপ্ন সাজাতে এসেছি স্বপ্নের পাঠশালায়।

 

নাজমুল মৃধা পাভেল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়