নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সংকটের মধ্যে ওয়াশিংটনে গিয়ে বৈঠক করলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেছেন, এক দিনের মধ্যেই র্যাব ও সাত কর্মকর্তার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া সম্ভব নয়।
এটি সুইচ অন-অফের মতো নয়। রাতারাতি সিদ্ধান্ত বদলেও দেয়া সম্ভব নয়। এটি চাইলেও সম্ভব নয়। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত সোমবার ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এনটনি ব্লিংকেন ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশ দলে পররাষ্ট্র সচিব ড. মাসুদ বিন মোমেনসহ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনায় হয়েছে। আমরা দেশে বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ ইলেকট্রনিক খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগসহ জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এ সময় তিনি বলেন, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রাখতে পারে। র্যাবের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া পার হতে হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওদের প্রসেস আছে, এটা আমাদের কমপ্লিট করতে হবে। এটাতে সময় লাগবে। সুইচের মতো না যে এক দিনে অন আর অফ করতে পারবে। বাংলাদেশে অনেক কিছু সহজে করা গেলেও যুক্তরাষ্ট্রে সেভাবে করা যায় না বলে মন্তব্য করে মোমেন বলেন, আমাদের দেশের সরকার ইয়েস বললে ইয়েস হয়ে গেল। এখানে অনেক সময় চাইলেও পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে র্যাব গঠন এবং নিষেধাজ্ঞা-পরবর্তী চার মাসে এ এলিট ফোর্সের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরেন মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বৈঠক শুরুর আগে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য প্রচার করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে জ্বালানির বাইরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ নানা খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আকাশপথে চলাচল, বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস), আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
