মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ক্রমেই নাজুক হচ্ছে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি। দিন যতই যাচ্ছে, পতনের আকারও তত বড় হচ্ছে। পতনের জের ধরে গতকাল একদিনের পতনেই ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার
কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি প্রধান সূচকের পতন হয়েছে প্রায় দুই শতাংশ। ফলে দিন শেষে হতাশ হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এই ধরনের বড় পতন তাদের আরও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলছে।
গত এক মাসে মোট লেনদেন হয়েছে ২১ কার্যদিবস। এর মধ্যে ছয় কার্যদিবসেই বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন হয়েছে গতকাল। এদিন সকাল থেকেই সূচকের নি¤œমুখী প্রবণতা দেখা যায়। দিন শেষে প্রধান সূচক ৭৫ পয়েন্ট কমে স্থির হয় চার হাজার ৫৯৬ পয়েন্টে। শতাংশের হিসাবে পতন হয়েছে প্রায় দুই শতাংশ। একদিনে সূচকের এ ধরনের পতনকে বড় পতন বলে আখ্যায়িত করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
এদিকে একদিনের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি। গতকাল ডিএসইতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ৪৮ হাজার ২৩৪ টাকা, আগের কার্যদিবসে যার পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৫২ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক উপদেষ্ট ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, একদিনে সূচকের এক শতাংশ কিংবা এর বেশি পতন হলে সেটাকে বড় পতন বলা যায়। বাজারে এমন পতন হলে ঠিক কী কারণে এ পরিস্থিতি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা উচিত।
এদিকে পতন অব্যাহত থাকায় পুঁজিবাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন প্রায় ২৬ লাখ বিওধারী। কারণ, হাতেগোনা কিছু পোর্টফোলিও ছাড়া প্রতিদিনই অন্যসব পোর্টফোলিও থেকে পুঁজি উধাও হয়ে যাচ্ছে। ফলে লাভের হিসাব বাদ দিয়ে প্রতিদিন কত লোকসান হচ্ছেÑসে হিসাব কষতে হচ্ছে ছোট-বড় সব ধরনের বিনিয়োগকারীকে।
একইভাবে পতনের জেরে লেনদেনও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। সম্প্রতি লেনদেন ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। গতকাল ডিএসইতে মোট ৩৪৯ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনাবেচা হয়।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলেন, পুঁজিবাজারে এখনও এমন কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি, যে কারণে বাজার এমন অস্থিতিশীল হবে।
অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বাজার পতনের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না এর নিয়ন্ত্রক-সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, পুঁজিবাজার এখন যে পরিস্থিতিতে রয়েছে, এখান থেকে চলমান পতন কাম্য নয়।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, সম্প্রতি পুঁজিবাজারে যে ধরনের পতন অব্যাহত রয়েছে, এর বিশেষ কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না। তবে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধারণ করতে বলব। তারা যদি ধৈর্যহারা হয়ে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিতে থাকেন তাহলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পাশাপাশি বাজারও তার স্বরূপে ফিরে আসবে না।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি শিগগির বাজার পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।
একই প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, গত বছর লক ফ্রি হওয়া আইপিও শেয়ার ও বোনাস শেয়ারের কারণে বাজারে শেয়ারসংখ্যা বেড়ে গেছে, যে কারণে শেয়ারের চাহিদাও কমে গেছে। ফলে দরও কমছে। তবে বাজারের চলমান পরিস্থিতির জন্য এসব কিছুকেই দায়ী করা যায় না। কারণ সিংহভাগ শেয়ারদর তলানিতে রয়েছে।