এক দিনে চার এজিএম করে ১২ লাখ টাকা নিলেন চেয়ারম্যান

রোহান রাজিব: আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে না পেরে বন্ধ হতে যাওয়া পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) এক দিনেই চারটি বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করেছে। গত ২৯ অক্টোবর ডিজিটাল প্লাটফর্মে ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের এজিএম অনুষ্ঠিত হয়। মাত্র ৩ ঘণ্টায় চারটি এজিএম সম্পন্ন করে কোম্পানির চেয়ারম্যান হাসান শহীদ ফেরদৌস সম্মানি হিসেবে নিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। তিনি সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন। এ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন তিনি। তাই উচ্চ আদালত এখন থেকে এজিএমের জন্য সবার সম্মানি কমিয়ে আদেশ দিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক আদেশে জানা যায়, এখন থেকে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিটি এজিএমের জন্য চেয়ারম্যান ও পরিচালক ২৫ হাজার টাকা করে সম্মানি নিতে পারবেন। আর বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিতির জন্য নেয়া যাবে ১০ হাজার টাকা।

জানা যায়, এর আগে প্রতিটি এজিএমের জন্য চেয়ারম্যান ৩ লাখ টাকা এবং পরিচালকদের ১ লাখ টাকা সম্মানি নেয়ার সুযোগ ছিল। এছাড়া প্রতিটি বোর্ড মিটিংয়ের জন্য চেয়ারম্যানের ৫০ হাজার টাকা ও পরিচালকদের জন্য ২৫ হাজার টাকা নির্ধারিত ছিল। তবে এক দিনে চারটি এজিএমের জন্য কারও এত টাকা নেয়ার বিষয়টি সব পক্ষের ধারণার বাইরে ছিল বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের চেয়ারম্যান হাসান শাহীদ ফেরদৌস শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এসব এজিএম আমাদের সময়ের নয়, পূর্বের এজিএম করা হয়েছে। এ ধরনের এজিএম এক দিন নয়, এক ঘণ্টায়ও হতে পারে। কারণ পেছনের এজিএম নিয়ম রক্ষার জন্য। এটা শুধু এই কোম্পানির নয়, যাদেরই এজিএম বাকি থাকে তারা এক দিনেই করে। আর এজিএমের সম্মানি আদালত থেকেই নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আদালতের নির্ধারিত সম্মানি নিতে বাধা কোথায়? আমরা কি করছি না করছি সবকিছুই আদালতে রিপোর্ট করা হয়েছে। সুতরং এসব নিয়ে কথা বলে লাভ নেই।’

তিনি আরও বলেন, সম্মানি বেশি হতে পারে। তবে তখন কোম্পানির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। প্রতিষ্ঠানের হাল ধরার কোনো লোকই পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রার পর থেকে গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল পিপলস লিজিং। কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির কারণে কোম্পানির অবস্থা ধারাবাহিকভাবে খারাপ হতে থাকে। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পেরে আমানতকারীদের টাকাও তারা ফেরত দিতে পারেনি। এই ঋণ কেলেঙ্কারীর ‘হোতা’ হিসেবে পরিচিত পি কে হালদার এখন ভারতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন। দেশেও তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা চলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়। পরে সাময়িক অবসায়ক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের একজন উপমহাব্যবস্থাপকে নিয়োগ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই মামলার ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে আদালত পিপলস লিজিংয়ের ঋণ খেলাপিদের তলব করেছিলেন।

পরে আমানতকারীরা কোম্পানিটি অবসায়ন না করে পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে মত দেন। এরপর ২০২১ সালের ২৮ জুন পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসকে পুনরুজ্জীবিত করার আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। গঠন করে দিয়েছিলেন বোর্ডও। কিন্তু বোর্ডের সদস্যদের পদত্যাগ, স্বাস্থ্যগত কারণে মিটিংয়ে হাজির না হওয়ার কারণে কোম্পানি পরিচালনায় সমস্যা হলে পিএলফএসএলের পক্ষে একটি আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৬ মে পিপলস লিজিংয়ের পরিচালনা বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হাসান শহীদ ফেরদৌসকে এই বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব কাজী আনোয়ারুল হক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) কাজী তৌফিকুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম, মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম রানা এফসিএ, সঞ্চয়কারীদের প্রতিনিধি মো. আতিকুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে এই বোর্ডের কাজী তৌফিকুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম রানা এফসিএ পদত্যাগ করেছেন।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০