Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 11:13 pm

এক দিনে ডেঙ্গুতে রেকর্ড ১৯ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত (এক দিনে) সর্বোচ্চ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও এক হাজার ৭৯২ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।

আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯২২ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৭০ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট পাঁচ হাজার ৫৫২ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে তিন হাজার ৩৭০ ডেঙ্গু রোগী এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে দুই হাজার ১৮২ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭৯২ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৬ হাজার ৩৯৮ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯ হাজার ৩৯৪ জন।

আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২০ হাজার ৯৪ জন। ঢাকায় ১২ হাজার ৯১৫ এবং ঢাকার বাইরে সাত হাজার ১৭৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

এদিকে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনও দেখা যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য-উপাত্ত বলছে, দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হন। ওই বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল আটজনের। আর গত বছর (২০২২) দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়। গত বছরও প্রথম ছয় মাসে মৃত্যু হয়েছিল একজনের।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও চিকিৎসকদের আশঙ্কা, এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্য সব বছরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লে বাড়তে পারে মৃত্যুর সংখ্যাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহামারিতে যেমন তৎপরতা নেয়া হয়ে থাকে, তেমন করে প্রস্তুতির তাগিদ দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।

ঢাকায় প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১৯৬৫ সালে। তখন ডেঙ্গুবাহিত জ্বরটি ‘ঢাকা ফিভার’ নামে পরিচিত ছিল। এরপর বিভিন্ন সময় কিছু ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে বেশ কিছু ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গিয়েছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস মশাবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়ে যায়। সে বছর দেশে পাঁচ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। আর সে বছর এডিস মশাবাহিত এ রোগে মৃত্যু হয় ৯৩ জনের। ২০০০ সালের পর প্রতিবছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তবে সব বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়নি। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল এই চার বছর এবং ২০১৪ সালে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি।

২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এরপর দেশের সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয় গত বছর (২০২২)। আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। মারা যান ২৮১ জন। এটি ছিল দেশে যেকোনো বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু।