নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের পুঁজিবাজারে গতকাল সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে মহাপতন দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। এক দিনে সাড়ে তিনশরও বেশি শেয়ারের দরপতন হয়েছে। সূচক কমেছে ১৮২ পয়েন্ট। লেনদেন তলানিতে নেমে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাজারে। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আরও কমতে পারে এই ভয়ে সবাই শেয়ার বিক্রি করে দিতে চাইছেন। সেই বিক্রির চাপে বাজারে বড় পতন হচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ হামলা শুরুর দিন সূচক যত পড়েছিল, অষ্টম কর্মদিবসে সোমবার তা পড়েছে আরও বেশি। এই কয় দিনে সূচক পড়েছে ৩৮২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন ৫৭ পয়েন্ট সূচক পতনের স্মৃতি নিয়ে দ্বিতীয় কর্মদিবসে গতকাল সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর পর সময় যত গড়িয়েছে, সূচক কেবল পড়েছেই। বেলা শেষে আগের দিনের চেয়ে ১৮২ পয়েন্ট কমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দাঁড়ায় ছয় হাজার ৪৫৬ পয়েন্ট।
যে ৩৭৯ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে, তার মধ্যে দাম বেড়েছে কেবল ১০টির। এর মধ্যে আবার তিনটির দাম বেড়েছে এক শতাংশের কম। দর ধরে রাখতে পেরেছে ৮টি কোম্পানি, আর কমেছে ৩৬৪টির দর। এক দিনে এত বেশি কোম্পানির শেয়ারের দরপতন সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। পুঁজিবাজারের এই অবস্থান গত বছরের ২৯ জুলাইয়ের পর সর্বনিন্ম। সেদিন ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ছয় হাজার ৪২৫ পয়েন্ট। তবে সে সময় বিনিয়োগকারীরা ছিল উৎফুল্ল। কারণ, তখন বাজারে ছিল চাঙ্গাভাব আর প্রায় প্রতিদিনই সূচক আগের অবস্থানকে ছাড়িয়ে ২০১০ সালের মহাধসের পর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে যায়।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৪০ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। এর ফলে টানা ৭ কর্মদিবস এক হাজার কোটি টাকার কম লেনদেন হলো। লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল বস্ত্র খাতের। লেনদেনের ১৩ শতাংশ ছিল খাতটির দখলে। পরের অবস্থানে ছিল যথাক্রমে ওষুধ ও রসায়ন ১২ দশমিক ৭ শতাংশ, বিবিধ ১০ দশমিক ৮ শতাংশ, প্রকৌশল ৮ দশমিক ৭ শতাংশ, ব্যাংক ৭ দশমিক ৯ শতাংশ ও খাদ্য ৭ দশমিক ২ শতাংশ। বাকি খাতের লেনদেন সাত শতাংশের নিচে ছিল।
টানা দ্বিতীয় দিন সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। শেয়ারদর ৩.০৩ শতাংশ কমার কারণে সূচক পড়েছে ১৭.২২ পয়েন্ট। গ্রামীণফোনের দর ১.৭ শতাংশ কমায় সূচক পড়েছে ১৩.২৩ পয়েন্ট। তৃতীয় অবস্থানে থাকা লাফার্জহোলসিম সিমেন্টের দর ৬.৬৩ শতাংশ কমায় সূচক পড়েছে ৯.১ পয়েন্ট। ওয়ালটন, বেক্সিমকো লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, রেনাটা, বার্জার পেইন্টস ও ইউনাইটেড পাওয়ারও সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল। সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানির কারণে সূচক পড়েছে ৭৭.৮২ পয়েন্ট।