এক দিনে ২৯ হাজার কোটি টাকা ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা পাঁচ দিন বন্ধের পর সীমিত পরিসরে গত বুধবার ব্যাংক লেনদেন শুরু হয়েছে। ওইদিন কিছু শাখা খোলা রেখে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত লেনদেন হয়। যেসব শাখা খোলা ছিল সেগুলোয় টাকা জমার চেয়ে উত্তোলন হয়েছে বেশি। এদিন বেশির ভাগ এটিএম বুথও খুলে দেয়ায় সেখান থেকেও অনেকে টাকা তুলেছেন। এতে বেশির ভাগ ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়ে। গ্রাহক চাহিদা মেটাতে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বুধবার ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ধার করে। এর মধ্যে শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেয় ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। বাকি ৩ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা নিয়েছে আন্তঃব্যাংক কলমানি থেকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে টানা পাঁচ দিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। অনেকের ধারণার বাইরে ছিল যে, পাঁচ দিন ব্যাংক বন্ধ থাকতে পারে। দৈনন্দিন খরচ মেটানোর জন্য মানুষ এখন আর অনেক বেশি টাকা হাতে রাখে না। টানা বন্ধের পর বুধবার ব্যাংক খোলায় অনেকে টাকা উত্তোলনের জন্য শাখায় এসেছিলেন। এদিন জমার পরিমাণ কম হওয়ায় ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়ে। তাই সংকট সামাল দিতে আন্তঃব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে।

জানা যায়, গত বুধবার ৫৫ ব্যাংক ও ৪টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ধার করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বুধবার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো, অ্যাসিউরড রেপো, অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট (এএলএস) ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির (আইবিএলএফ) নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এই নিলামে ৭ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১৪টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার ৭ কোটি টাকা, ১৪ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ৯টি ব্যাংককে ২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, ২৮ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১২টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা দেয়া হয়।

এছাড়া বুধবার ১৮০ দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড রেপোর আওতায় তিনটি ব্যাংককে পাঁচ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা এবং একদিন মেয়াদি অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট আওতায় ১১টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংককে তিন হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা দেয়া হয়। পাশাপাশি ১৪ দিন মেয়াদি ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় একটি ব্যাংককে ৪৯৭ কোটি টাকা ও ২৮ দিন মেয়াদে পাঁচটি ইসলামি ধারার ব্যাংককে ৯৮৪ কোটি টাকা দেয়া হয়। সব মিলিয়ে বুধবার ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ধার দেয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, সাত দিন মেয়াদে টাকা ধারের সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, ১৪ দিন মেয়াদে সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ও ২৮ দিন মেয়াদি টাকা ধারের সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া অ্যাসিউরড রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটির সুদহার ছিল সাড়ে আট শতাংশ। ইসলামি ধারার ব্যাংকের জন্য মুনাফার হার ছিল সাড়ে পাঁচ শতাংশ। ২৮ দিন মেয়াদি ইসলামি ধারার ব্যাংকের জন্য মুনাফার হার ছিল তিন দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ছয় শতাংশ।

এছাড়া গত বুধবার আন্তঃব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংক তিন হাজার ৬৫১ কোটি টাকা ধার করে। এর মধ্যে একদিন মেয়াদি কলমানিতে ধার ছিল দুই হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। গড়ে আট দশমিক ৮৩ শতাংশ সুদে এ লেনদেন হয়। অন্য বিভিন্ন মেয়াদি ধারে সর্বোচ্চ সুদ ওঠে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে তৈরি হওয়া সহিংস পরিস্থিতির কারণে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে কারফিউ ঘোষণা করে সরকার। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পর মঙ্গলবার পর্যন্ত ছিল সাধারণ ছুটি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে ওই দিন গ্রাহক উপস্থিতি ছিল খুব কম। তার আগের দিন বুধবার ছিল সরকারি ছুটি। নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক এটিএম বুথ বন্ধ রাখা হয়।

এছাড়া এমএফএস লেনদেনও একেবারে সীমিত হয়ে আসে। ফলে আর্থিক সেবা নিতে নানা ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। এর মধ্যে কারফিউ শিথিল করে বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে সব ব্যাংক, অফিস খুলেছে। এদিন বন্ধ থাকা বেশির ভাগ এটিএম বুথ খুলে দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা ছিল। ওইদিন ব্যাংকগুলোর শাখায় নগদ টাকা তোলার হিড়িক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল আন্তঃব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ৪ হাজার ৬১ কোটি টাকা ধার করে। এর মধ্যে এক দিন মেয়াদি কলমানিতে ধার ছিল ৩ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। গড়ে ৯ দশমিক ০৪ শতাংশ সুদে এ লেনদেন হয়। অন্য বিভিন্ন মেয়াদি ধারে সর্বোচ্চ সুদ ওঠে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০