মো. আসাদুজ্জামান নূর: সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পতন দেখা গেছে। গতকাল সোমবারও মূল্য সূচকের পতনের সঙ্গে টাকার অঙ্কে লেনদেনও কমেছে বড় ব্যবধানে। এদিন ডিএসইতে ৩৯ শতাংশ কমে লেনদেন হয়েছে ৬০০ কোটি টাকার ঘরে, যা গত আট মাসের পর সর্বনি¤œ। এর চেয়ে কম লেনদেন ছিল গত ১৮ এপ্রিল। কভিডের লকডাউনের সেই সময়ে লেনদেন হয়েছিল ৬০২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার।
লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, আগের দিন লাফ দেয়া স্বল্প মূলধনি বেশিরভাগ কোম্পানির দর পড়ে গেছে গতকাল। রোববার সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ৫০টি কোম্পানির প্রায় সবগুলোই ছিল স্বল্প মূলধনি। সোমবার সবচেয়ে বেশি দর হারানো বেশিরভাগ কোম্পানিই স্বল্প মূলধনির।
গতকাল ৩৭৭টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০১টির, কমেছে ২২৮টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৪৮টি কোম্পানির। সিংহভাগ কোম্পানির দরপতনের দিনে গতকাল লেনদেন হয়েছে ৬৯৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট, যা আগের দিনের চেয়ে ৪৫১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা কম। রোববার লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ১৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকার।
গতকালের লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ব্যাংক খাতের। এ খাতের লেনদেনই ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গতকাল ১১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেনে মাধ্যমে এ খাতের অবদান দাঁড়ায় ১৭ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল ২৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। গতকাল এ খাতের ৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে হ্রাস পেয়েছে ১৩টির ও অপরিবর্তিত ছিল ১০টির।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবদান ছিল ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল আট দশমিক শূন্য এক শতাংশ। গতকাল এ খাতের ১৬টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে তিনটি করে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ও অপরিবর্তিত থাকতে দেখা গেছে।
তৃতীয় অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতের লেনদেন। ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ অবদান রাখা এ খাতের ২১টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেতে দেখা যায়। এর বিপরীতে শেয়ারদর বেড়েছে সাতটির ও অপরিবর্তিত ছিল মাত্র দুটির।
আট দশমিক ৯২ শতাংশ অবদান রেখে বস্ত্র খাত চতুর্থ অবস্থানে ছিল। গতকাল এ খাতের ১১টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে কমেছে ৪২টির ও অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটির। আগের কার্যদিবসে এ খাতের অবদান ছিল ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
পঞ্চম অবস্থানে থাকা বিবিধ খাতের অবদান ছিল আট দশমিক ৩৯ শতাংশ। আগের কার্যদিবসে এটি ছিল ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ। গতকাল এ খাতের ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ে, কমে মাত্র একটির ও অপরিবর্তিত ছিল দুটির। লেনদেনে এর পরের অবস্থানে ছিল জ্বালানি, প্রকৌশল, খাদ্য, সাধারণ বিমা ও অন্যান্য খাত।
গত বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সিদ্ধান্ত নেয়, যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম, তাদের এক বছরের মধ্যে মূলধন এ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। যেসব কোম্পানির মূলধন ২০ কোটি টাকার বেশি, তারা সময় পাবে ছয় মাস, আর যেগুলোর মূলধন ২০ কোটি টাকার কম, তারা সময় পাবে এক বছর। মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বোনাস শেয়ার, রাইট শেয়ার বা রিপিট আইপিওর পরামর্শ দেয় বিএসইসি। এ খবরে রোববার যাচাই-বাছাই ছাড়া দাম বাড়তে থাকে।
পুঁজিবাজারে এ ধরনের স্বল্প মূলধনি কোম্পানি আছে ৬৪টি। এসব কোম্পানির মধ্যে বহু লোকসানি বছরের পর বছর লভ্যাংশ দিতে পারেনি। কোনো কোনোটির উৎপাদন বন্ধ, ঋণে জর্জরিত। কিন্তু দাম বেড়েছে প্রায় সবগুলোর। কিন্তু একটি বিষয় বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। সেটি হলো পরপর তিন বছর মুনাফায় না থাকলে রিপিট আইপিও করা যাবে না, রিজার্ভ টাকা না থাকলেও বোনাস ও রাইটও দেয়া যাবে না। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দিনেই কিছুটা সচেতন হন বিনিয়োগকারীরা। এ প্রক্রিয়ায় আগের দিন বেশি দরে যারা শেয়ার কিনেছিলেন, তারা এক দিনেই পড়েছেন লোকসানে।
গতকাল বেশিরভাগ কোম্পানির দরপতনে প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৩৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ছয় হাজার ৮৮২ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএস৩০ সূচক ১৮ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৫৮৫ পয়েন্টে এবং ডিএসইএস বা শরিয়াহ্ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪৬০ পয়েন্টে অবস্থান করে।
স্বল্প মূলধনি কোম্পানি শেয়ারের দরপতন হলেও সূচকে এসব কোম্পানির অবদান থাকে কমই। যে কারণে সূচকে নেতিবাচক প্রভাব রাখা ১০টির একটিমাত্র কোম্পানি ছিল এ ধরনের। টানা দ্বিতীয় দিন সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটির তিন দশমিক ৪৪ শতাংশ দরপতনে সূচক থেকে কমেছে ১০ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট। এছাড়া ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি, ওয়ালটন, লিনডে বিডি, গ্রামীণফোন, বেক্সিমেকো ফার্মা, ওয়ান ব্যাংক, ইবিএল, ইউনিলিভার ও রবির দরপতনের কারণেও সূচক পড়েছে সবচেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে এ ১০টি কোম্পানিই সূচক ফেলেছে ৩১ দশমিক ৪১ পয়েন্ট।