দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে শিক্ষার প্রভাব সর্বাধিক। শিক্ষিত প্রজন্মের হাতেই গড়ে ওঠে দেশ। দেশের অগ্রগতি কিংবা সামনে চলাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনা করেই বহু আগে দার্শনিকরা বলেছিলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। সময়ের পরিক্রমায় এ নীতিবাক্য যেন বদলে গেছে আমাদের দেশে। কষ্টে দিনাতিপাত করছেন দেশের এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। একদিকে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দশা, অপরদিকে ব্যয়ের তুলনায় ক্রমেই সংকুচিত আয় এ দুয়ে মিলে বিভীষিকাময় সময় পার করছেন তারা। জাতির মেরুদণ্ড গড়ার কারিগরদের কেন এমন বেহাল অবস্থা? চলুন খুঁজি তার উত্তর। তারা চাকরিজীবনে অল্প বেতনে স্বল্প খেয়ে করছেন দিনপার। চাকরির মেয়াদকাল শেষে মোট বেতনের ৭৫ গুণ অবসরকালীন ভাতা এককালীন পেলেও একেবারেই পান না অবসরকালীন মাসিক ভাতা। আবার চাকরির শেষ বয়সে এসেও জীর্ণশীর্ণ শরীর আর রোগশোকে জর্জরিত হয়ে পাঠদান করে চিকিৎসা ভাতা পান মাত্র ৫০০ টাকা। বলতে গেলে এ পরিমাণ টাকায় হাঁটু আর কোমরব্যথার ওষুধও কেনা সম্ভব হয় না। অগত্যা উপায় কী? একমাত্র সম্বল কম দামের প্যারাসিটামল। বাড়িভাড়া প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এ শ্রেণির শিক্ষকরা হন বৈষম্যের শিকার। যেখানে দেশের একটি ছোটো শহরেও ন্যূনতম বাড়িভাড়া মাসিক পাঁচ হাজার টাকা, সেখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পাচ্ছেন মাত্র এক হাজার টাকা। এ টাকায় যে ঝুপরি ঘরও মেলে না, সে কথা বোধহয় কর্তৃপক্ষ জানেই না। বাড়িভাড়া প্রশ্নে বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের নাইবা টানি।
সাম্প্রতিক সময়ে পণ্যদ্রব্যের বাজারে দেখা দেয় চরম অস্থিরতা। একের পর এক সিন্ডিকেটে দিশাহারা ভোক্তা সমাজ। ভোক্তা সমাজের অংশ হয়েও মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকা প্রারম্ভিক বেতনে একবেলা অভুক্ত অবস্থায় দিন পার করছেন তারা। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মোটামুটি টেনেটুনে সংসার চালাতে পারলেও বেসরকারি শিক্ষকদের দ্বারা সেটিও হয়ে ওঠে না।
পেটের দায়ে ক্লাসে না পড়িয়ে প্রাইভেট টিউশনির পথ বেছে নিচ্ছেন অনেক শিক্ষক। আবার শিক্ষকদের একটি বড় অংশই নৈতিকতার দরুন এ পথে না গিয়ে দুঃখ-কষ্টে পার করছেন দিন। শিক্ষকদের বেতনের এই বৈষম্য কাটিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে দেশের সব মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করার বিকল্প নেই। অতিদ্রুত এ কার্যক্রম সম্পন্ন করে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্নীতির সব সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে গড়ে তুলতে হবে নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম। সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেমন সুযোগ পায়, ঠিক একই সুযোগ-সুবিধা পেলে স্বরূপে ফিরবে দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় দেখা মেলে সরকারি মাধ্যমিকের বিপরীত চিত্র। দেখে মনে হয় এ চিত্র যেন এক দেশ দুই নীতির দ্বিধাহীন আত্মপ্রকাশ। দেশের সামগ্রিক শিক্ষার উন্নয়নে অচিরেই মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ করতে হবে।
জিহাদ হোসেন রাহাত
লক্ষ্মীপুর