এক নজরে

সংগঠনটি মাত্র ১৫ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা করে। আজ এর ব্যাপ্তি দেশজুড়ে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে গেছে তৃণমূল পর্যায়েও। ১৯৭৮ সালে যাত্রা করা প্রতিষ্ঠানটি একটি

আন্দোলনও বটে।

কার্যক্রম
বাংলা সাহিত্য সেবায় সদা সজাগ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। বাংলাদেশি সাহিত্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্যের বিশদ ভাণ্ডার বলা যায় এ কেন্দ্রকে। বাঙালি সংস্কৃতির লালন ও বিকাশ সাধনে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে তারা। এর মধ্যে রয়েছে দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কার্যক্রম, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি, কেন্দ্র লাইব্রেরি, আলোর ইশকুল, প্রকাশনা, শ্রবণ-দর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোর পাঠশালা ও প্রাথমিক শিক্ষকদের বইপড়া কর্মসূচি।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে দরকার সচেতন মানুষ। এমন মানুষ হবেন উচ্চ-মূল্যবোধসম্পন্ন, আলোকিত, উদার, শক্তিমান ও কার্যকর। তাদের নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে দেশ। বিচ্ছিন্নভাবে নয়, একত্রিতভাবে এদের সংখ্যা হওয়া উচিত লক্ষ-কোটি। তাদের একই সুতোয় গাঁথা গেলে তৈরি হবে জাতীয় শক্তি। এ শক্তি গঠনই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্বপ্ন।
এর মূল হচ্ছে আলোকিত, কার্যকর ও উচ্চ-মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি। তাদের জাতীয় শক্তি হিসেবে সংঘবদ্ধ ও সমুন্নত রাখা। একই সঙ্গে মানুষের চিত্ত বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবন
কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন রয়েছে। ৯ তলাবিশিষ্ট এ ভবন নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুদানে। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের কার্যকর প্রাণকেন্দ্রও হয়ে উঠছে এটি। এখানে নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচির নিয়মিত আয়োজন করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে
সাহিত্য-সংস্কৃতিপ্রিয় ব্যক্তির নিয়মিত পদচারণায় মুখর ও প্রাণচঞ্চল থাকে ভবনটি। রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত ভবনটিতে রয়েছে নানা শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ। এখানে রয়েছে দুই লাখেরও বেশি বই নিয়ে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। এছাড়া রয়েছে চিত্রশালা, মিলনায়তন ও সম্মেলন কক্ষ। রয়েছে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংগীত ও চলচ্চিত্রসমৃদ্ধ আর্কাইভ, অতিথি কক্ষ, বই বিক্রয়কেন্দ্র, ক্যাফেটেরিয়াসহ কিছু শ্রেণিকক্ষ ও অফিসের কাজে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত এলাকা।

অর্জন
নগর-মহানগর ছাড়িয়ে মফস্বল হয়ে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। মানুষের মননে উৎকর্ষ সাধনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে তারা। এখন পর্যন্ত স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে প্রায় ৫০ লাখ শিক্ষার্থীকে নানা কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করেছে কেন্দ্র। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিসহ নিয়মিত কার্যক্রমে দেশের নানা প্রান্তের প্রায় দেড় মিলিয়ন শিক্ষার্থী যুক্ত আছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের জন্য এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ দেশে-বিদেশে অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ‘র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার ২০০৪’ ও ‘জ্যান অ্যামোস কমিনিয়াস পদক ২০০৮’। প্রথমটি সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও উদ্ভাবনী যোগাযোগ পদ্ধতির জন্য দেওয়া হয়। দ্বিতীয়টি ইউনেস্কোর সবচেয়ে সম্মানসূচক পদক। ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টিতে চমকপ্রদ পদ্ধতি, অবদান ও অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ পুরস্কার প্রদান
করা হয়।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অর্থের প্রধান উৎস সরকারের অনুদান। তাদের পাশাপাশি এনজিও, আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিবিশেষ, নরওয়ে দূতাবাস, ডেনমার্ক দূতাবাস, বিশ্বব্যাংক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, র‌্যামন ম্যাগসাইসাই ফাউন্ডেশন, সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ ও সিটি গ্রুপ ফাউন্ডেশন আর্থিক সহায়তা করে থাকে। দেশের বাইরে লন্ডন ও নিউইয়র্কে সীমিত আকারে কার্যক্রম পরিচালনা করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।
কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য ৯ জন। এর বার্ষিক বাজেট প্রায় ৩১১ মিলিয়ন টাকা। প্রায় ১০ হাজার স্কুলে তারা কার্যক্রম পারিচালনা করে থাকে। এ সংস্থায় নিয়মিত ও অনিয়মিত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন প্রায় ১১ হাজার। ছাত্রছাত্রী ও অন্যান্য লোকবল মিলিয়ে তাদের নিবন্ধিত সদস্য প্রায় ৫০ লাখ।

হাসান আদিল, সাংবাদিক

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০