নিজস্ব প্রতিবেদক: কোনো পরিবার থেকে সর্বোচ্চ তিনজন ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে থাকতে পারবেন, এমন বিধান রেখে ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আগে একটি পরিবার থেকে চারজন ব্যাংকের পরিচালক হতে পারতেন। এখন সেটি তিনজন করা হয়েছে। ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১’-এর ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। একে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে মোট ৩৪টি ধারণা রয়েছে। এখানে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি কারা, তার একটা সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
সামর্থ্য থাকার পরও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ঋণ, অগ্রিম বা বিনিয়োগ বা আর্থিক সুবিধার অংশ বা তার ওপর আরোপিত সুদ পরিশোধ না করে, তাহলে তা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে।
মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, এছাড়া কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের নামে আর্থিক সুবিধা নিলে, সেটাকেও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির আওতায় আনা হয়েছে। একই সঙ্গে যে উদ্দেশ্যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ অগ্রিম নেয়া হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করলেও ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি ঋণ গ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরবরাহ করবে।
মাহমুদুল হোসাইন খান আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) কাছে কোম্পানি নিবন্ধনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।
তিনি বলেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হিসেবে পরিগণিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করতে পারবে। নোটিশ দেয়ার দুই মাসের মধ্যে ঋণখেলাপি গ্রহীতা তার কাছে পাওয়া টাকা পরিশোধ ব্যর্থ হলে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা যাবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি ঋণখেলাপির তালিকা না পাঠায়, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০ লাখ এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা করতে পারবে।
তার পরও যদি লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে, তাহলে প্রতিদিনের জন্য এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা যাবে বলেও জানান মাহমুদুল হোসাইন খান। তিনি বলেন, ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন, ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ঋণ বিতরণ ও জামানত নেয়ার বিষয়টি নতুন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বা তার আত্মীয় যে-ই হোক না কেন তাকে অবশ্যই জামানত বা বন্ড বা সিকিউরিটি দিয়ে ঋণ নিতে হবে।
ব্যাংক কোনো পরিচালক বা পরিচালকের পরিবারের সদস্যকে জামানতি ঋণ বা অগ্রিম ব্যতীত অন্য কোনো ঋণ বা অগ্রিম মঞ্জুর করবে না।
মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, পরিচালক বা পরিচালকের সদস্য কর্তৃক দায় নেয়ার ভিত্তিতে জামানত ঋণ, অগ্রিম ঋণ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা দিতে পারবে না। এখন এটা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, সে যেই হোক না কেন প্রত্যেকের ক্ষেত্রে কোলাটেরাল থাকতে হবে। যেমন জামানত ও বন্ধক থাকতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সবার ক্ষেত্রে।
