নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বাইরে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও একই সুযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। গতকাল অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও অর্থনীতি-বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়ালি সাংবাদিকদের এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, বাংলাদেশের অনেক অর্জন। সেই অর্জনের সঙ্গে আজকে যুক্ত হলো আরও একটি অর্জন। সেটা হলো সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। এ পেনশন ব্যবস্থা সবার জন্য।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পেনশন ব্যবস্থাটি সম্বন্ধে আমাদের সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে বলা আছেÑবাধ্যর্কজনিত কারণে যারা অভাবগ্রস্ত হবে। এ অভাবগ্রস্তদের জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হবে। এ সাহায্য লাভের অধিকার রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বাধ্যর্কজনিত কারণে যেসব অভাব আসতে পারে বা আসে জীবনে, সেসব অভাবগ্রস্ত নাগরিক পেনশন পাবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বয়স্কদের টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় মৃত্যুকালীন সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটে আনা হয়েছিল যে, এটা আমরা বাস্তবায়ন করব। তার ধারাবাহিকতায় আমরা এখন এটা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এটা বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ লাভবান হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আয়ুকাল ৭৩ বছর। ২০৫০ সালে সেটা হবে ৮০ বছর। ২০৭৫ সালে আমাদের প্রাক্কলনে দেখানো হয়েছে, আমাদের আয়ুকাল হবে ৮৫ বছর। এতে দেখা যায়, আগামী তিন দশকে মানুষ অবসর গ্রহণের পরেও আরও ২০ বছর তার আয়ু থাকবে। সে সময়ে তার আয় থাকবে না, কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন। তাই তাদের দেখভালের জন্য কারও না কারও দায়িত্ব নিতে হবে। সরকার সে দায়িত্বটা নেবে।
তিনি বলেন, পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আরও বিস্তারিত আপনাদের কাছে শেয়ার করব। পর্যায়ক্রমে আমরা বাস্তবায়নে যাব। এখানে কিছু সংযোজন-বিয়োজন আরও অনেক জায়গায় হবে। কিন্তু আমাদের মৌলিক ধারণাগুলো আজ তুলে ধরছি। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এ ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারবেন। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিষয়টি আমরা পরে বিবেচনা করব। জাতীয় পরিচয়পত্রের ওপর ভিত্তি করে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত সব নাগরিক পেনশনের হিসাব খুলতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এই পদ্ধতি স্বেচ্ছাধীন থাকবে। পরে এটাকে পর্যায়ক্রমে বাধ্যতামূলক করা হবে।
তিনি বলেন, কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদাদানের মধ্যমে মাসিক পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। মাসিক সর্বনিন্ম চাঁদা নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসীরা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দিতে পারবেন। চাঁদা জমা দিতে ব্যর্থ হলে হিসাব সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। পরে জরিমানাসহ বকেয়া দিয়ে হিসাব চালু করতে পারবেন। পেনশনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ৬০ বছর পূর্তিতে নির্ধারিত হারে তহবিল থেকে আসবে। পেনশনধারীরা আজীবন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। নির্ধারিত চাঁদাদানকারী ৭৫ বছর হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করলে জমাকারীর নমিনি পেনশন পাবেন ৭৫ বছর পর্যন্ত।