এক বছরে কমেছে ২০ হাজার কোটি টাকা

রোহান রাজিব: ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট বেড়েছে। গত এক বছরে ব্যাংক খাতে তারল্য কমেছে ২০ হাজার কোটি টাকা। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ নিয়ে চাহিদা মেটাচ্ছে। তারল্য কমার সঙ্গে সঙ্গে অলস টাকার প্রবাহও কমেছে ব্যাংক খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ব্যাংকিং খাতে আমানত কমে যাওয়া, ঋণ প্রবাহ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া, রেমিট্যান্স কমে যাওয়া ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকার বিনিময়ে ডলার কেনার কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য প্রবাহ কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই শেষে ব্যাংক খাতে মোট তারল্য ছিল ৩ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুলাই শেষে ব্যাংক খাতে তারল্য ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। যা এক বছরের ব্যবধানে কমছে ২০ হাজার কোটি টাকা।

বর্তমানে ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ তারল্য রয়েছে এর মধ্যে চলতি বছরের জুলাই শেষে সরকারের কাছে ৩ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড রয়েছে। অর্থাৎ এ পরিমাণ ব্যাংকের অর্থ সরকারের কাছে ঋণ আকারে রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংক খাতে নগদ অর্থ রয়েছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোতে তারল্য প্রবাহ কমার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত তারল্য প্রবাহও কমে গেছে। চলতি বছরের জুলাই শেষে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুলাই মাসে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। যা এ বছরের ব্যবধানে কমছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি বছরের জুন শেষে ছিল ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ১৪ হাজার কোটি টাকা।

তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকে কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে এ সময়ে তারল্য বেড়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন প্রজšে§র কিছু ব্যাংক ও দুর্বল ব্যাংক অতিরিক্ত তারল্য থাকা সত্ত্বেও তারল্য সংকটে ভুগছেন।

তারল্য কমার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়মিত ধার করছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ সেপ্টেম্বর কয়েকটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা ধার নেয়। ৪ সেপ্টেম্বর ৮ হাজার ১১৭ নেয়। এছাড়া গত ৩১ আগস্ট ৭ হাজার ১২৬ কোটি টাকা, ৩০ আগস্ট ১০ হাজার ৩০ কোটি টাকা, ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা এবং ২৫ আগস্ট ৬ হাজার ৮২ কোটি টাকা ধার করেছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সুদ গুনতে হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে স্বল্প সময়ের ঋণ কল মানি রেটের পরিমাণও বেড়েছে। গত আগস্টজুড়ে কল মানি রেট ছিল ৫ শতাংশের বেশি। যদিও আগের বছরে ঈদ ও বিভিন্ন উৎসব সামনে রেখে প্রায় ৪ শতাংশের বেশি ছিল এর পরিমাণ। গতকাল আন্তঃব্যাংক মানি মার্কেটে লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। যার রেট ছিল ৫.৫৩।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ব্যাংকিং খাতে আমানত আসা কমে যাওয়ার কারণে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছর শেষে ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবাহ আগের বছরের চেয়ে কমেছে ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ব্যাংকের আমানত এসেছিল ১ লাখ ২০ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। যেখানে আগের অর্থবছরে ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত বছর আমানত প্রবাহ কমেছে ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ।

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, সরকারি ও বেসরকারি মিলে বিদায়ী অর্থবছরে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। যেখানে আগের অর্থবছরে ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ ঋণের মধ্যে বেসরকারি খাতের ঋণই ছিল ১ লাখ ৬২ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। যেখানে আগের অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ ছিল ৯১ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ৭৭ দশমিক ৩০ শতাংশ।

সূত্র জানায়, গত অর্থবছরের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আমদানি ব্যয় মেটাতে ৭৫০ কোটি ডলারের জোগান দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২৪৯ কোটি ডলার ছাড় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ব্যাংকগুলো থেকে আরও ২৩ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। এর ফলেও তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে ব্যাংক খাতে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, আমানতকারীরা সুদহার কম হওয়াতে আমানত করছেন না। এজন্য ব্যাংক খাতে আমানত কমে গেছে। এফডিআর খুলছে না। আবার দেখা যাচ্ছে সঞ্চয়পত্র খোলাও কমে গেছে। এর ফলে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, এখন আবার বেসরকারি ঋণের প্রবাহ বেড়েছে। তার ফলে ঋণ প্রবাহ বেড়ে গেছে। এজন্য বিজনেস একটু ভালোর দিকে। আমদানি কমছে, তবে তা পর্যাপ্ত না। এ জন্য তারল্য সংকট। তবে এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে সুদহার তুলে দেয়া। যাতে ব্যাংক খাতে আমানত বাড়ে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০