নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে নানা সংকট চলছে। এর মধ্যেও কোটি টাকার আমানতকারী বেড়েছে। গত এক বছরে দেশে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে সাত হাজার ৬৬টি। ফলে ব্যাংকগুলোয় মোট কোটি টাকার ওপরে রয়েছে, এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাবের সংখ্যা এক লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬টিতে দাঁড়িয়েছে। গতকাল সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিডিউলড ব্যাংকস স্ট্যাটিসটিকসে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে নানা সংকট আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জাঁতাকলে পিষ্ট নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে পারছে না। ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারছে না। ব্যাংকে টাকা জমানো তো দূরের কথা, অনেকে আগের জমানো অর্থ ভেঙে খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতেও একশ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে। তারা বিত্তশালী বা বড় প্রতিষ্ঠান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৮৪টিতে। এসব হিসাবে জমা আছে ১৭ লাখ ১৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছেÑএমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬টি। কোটি টাকার ওপরে এসব হিসাবে জমা সাত লাখ ২৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৪২ দশমিক ৩৫ শতাংশ কোটি টাকার হিসাবধারীদের।
চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৯২টিতে। এসব হিসাবে জমা আছে ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছেÑএমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি। এই হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ৩২টি আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে সাত হাজার ৬৬টি। এক বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রান্তিকে কোটি টাকার হিসাব ছিল এক লাখ ছয় হাজার ৫২০টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাবসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৭৬০টিতে, যেখানে জমা ছিল এক লাখ ৮৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি এক টাকা থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ২২১টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
এছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে চার হাজার ৭৪টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে এক হাজার ৯৬৮টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ২৭৪টি এবং ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯১৯টি আমানতকারীর হিসাব। ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫১২টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৪৩টি এবং ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৭৪৭টি। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা এক হাজার ৭৭৮টি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।