সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: ১৯৯০ সালে স্বল্প পরিসরে খাতুনগঞ্জে মসলাজাতীয় পণ্যের ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করেন আবুল বশর চৌধুরী। তখন তার প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স। সময়ের পরিক্রমায় তিনি এখন দেশের প্রথম সারির ভোগ্যপণ্য চাল-ডালজাতীয় শস্যপণ্যের আমদানিকারক। এ সময়ের ব্যবধানে তিনি গড়ে তুলেছেন ১০টির অধিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে বিএসএম গ্রুপ। আর এসব প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গ্রুপটির গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার ব্যাংকে নতুনভাবে ঋণ বেড়েছে ৬৬০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এ চার ব্যাংকে গ্রুপটির মোট ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৮৭ কোটি টাকা।
বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামভিত্তিক উদীয়মান শিল্পগ্রুপ বিএসএম। এ গ্রুপের সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন আছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের। এ চার ব্যাংকে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএসএম গ্রুপের ঋণ ছিল এক হাজার ৮৭ কোটি এক লাখ টাকা। এর মধ্যে নতুনভাবে ঋণ নেওয়া হয় সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে ২৫৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও প্রাইম ব্যাংকে ১২২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর ন্যাশনাল ব্যাংকে আগের বছরের তুলনায় ১১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বেড়ে মোট ঋণ হয়েছে ৪৫৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে ১৬৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বেড়ে মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৪৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আর এ ঋণগুলো আছে মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স, মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রুবি ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড ও বিএসএম সিন্ডিকেট নামে। আর এসব প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে তরুণ আবুল বশর চৌধুরী খাতুনগঞ্জে ব্যবসা শুরু করেন। পাঁচ বস্তা জিরা, পাঁচ বান্ডিল দারুচিনি ও এক কার্টন এলাচি দিয়ে শুরু তার ব্যবসা। এখন তিনি দেশের ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় বড় আমদানিকারক ও শিল্পপতি। বর্তমানে বছরে তার প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপে (সাবেক মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স) লেনদেন হয় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বর্তমানে এ গ্রুপের চাল, ডাল, তেল, পাওয়ার, পলি, হ্যাচারি, জুট মিল, টেক্সটাইল মিল, আবাসানসহ মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠান আছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিন ব্যবসা টার্নওভার দুই হাজার চার কোটি টাকা। এ গ্রুপে দুই হাজার তিনশ’র অধিক জনবল আছে।
দেশের ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সাত বছর পর গত বছর থেকে চাল আমদানি করছি বাজারচাহিদার অনুপাতে। আর আমাদের এ বছর মোট আমদানির পরিমাণ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, যার আর্থিক মূল্য ২০০ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া ডালজাতীয় খাদ্যশস্য আমদানিতে শীর্ষ এ গ্রুপ। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্রুপ ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারণের জন্য তৎপর ভূমিকা পালন করছেন। তবে কেন ব্যাংকঋণ বাড়ছে, এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি এই কর্মকর্তারা।
ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঋণ পাওয়া সবার অধিকার, কিন্তু ঋণের উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা ব্যাংক ও ব্যবসায়ীর নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সুশাসনের ঘাটতি থাকায় ব্যাংকগুলোয় অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়ে যাচ্ছে। এতে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটালে এমনটি হওয়ার কথা নয়। ব্যাংকের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসছে। পরিস্থিতি উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও কঠোর হতে হবে।
বিএসএম গ্রুপের চেয়্যারম্যান ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক আবুল বশর চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি, ফলে মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আবুল বশর চৌধুরী ও তার আপন দুই মিলে মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স, মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মডার্ন পাইভার লিমিটেড, রুবি ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড, মডার্ন হ্যাচারি লিমিটেড, বিসমিল্লাহ ফেব্রিক্স লিমিটেড, মুকবুলুর রহমান জুট মিল লিমিটেড, বি কে ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে বিএসএম গ্রুপ।