হামিদুর রহমান: প্রযুক্তিতে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে জোরদারে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েজ ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) শনাক্তকরণ অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।এটি নিয়মিত কার্যক্রম। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিটিআরসি ১৯টি অভিযান পরিচালনা করে প্রায় চার লাখ ৮৮ হাজারেরও বেশি সিম জব্দ করে। আর শনাক্ত হওয়া এসব সিমের শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটক।
বিটিআরসির তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে অবৈধ ভিওআইপি শনাক্তকরণ অভিযানের মধ্যে সিমবক্স ডিটেকশন সিস্টেমের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার সিম। এছাড়া, এসআরপি (সেলফ রেগুলেটরি প্রোসেস)’র মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে প্রায় চার লাখ ৬৮ হাজার ৭৫১টি সিম জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া অন্য সিস্টেমে জব্দ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৫০৯টি সিম।
জব্দকৃত সিমের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। কোম্পানির জব্দকৃত সিম রয়েছে দুই লাখ ৫৭ হাজার ৪৩৫টি, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটকের জব্দকৃত সিম রয়েছে এক লাখ সাত হাজার ৮৮৯টি, রবি আজিয়াটার জব্দকৃত সিম রয়েছে প্রায় ৯২ হাজার ৫৮৯টি ও বাংলালিংকের জব্দকৃত সিম রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ২৫২টি।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, সিমবক্স ডিটেকশন সিস্টেম হচ্ছে সব মোবাইল অপারেটরের সমস্বরে বিটিআরসিতে স্থাপিত বিশেষ সিস্টেম, যা অনেক ভার্চুয়াল সার্কিট সমন্বয়ে গঠিত। এ ভার্চুয়াল সার্কিটে ফিজিক্যাল ও ভার্চুয়াল সিমের মাধ্যমে অনকল টেস্ট বেসিস মেথডে কল হিট করার মাধ্যমে অবৈধ কল টার্মিনেশন খুঁজে বের করে পাশাপাশি এতে জড়িত নম্বর শনাক্ত করা হয়। এ সিমবক্স ডিটেকশন সিস্টেমের মাধ্যমে শনাক্ত করা সিমের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে টেলিটক। রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানির সিম জব্দ করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ৬৯৫টি। এছাড়া রবি আজিয়াটার রয়েছে ১৪৬টি, গ্রামীণফোনের রয়েছে ১৪৪ ও বাংলালিংকের রয়েছে ১৫টি।
এদিকে এসআরপির (সেলফ রেগুলেশন প্রসেস) মাধ্যমে বিটিআরসি নির্ধারিত কিছু লজিক সমন্বয়ে একটি প্রোগ্রামিং স্ক্রিপ্ট প্রতিটি মোবাইল অপারেটর তার এমএসপিতে স্থাপনকৃত সিডিআর-এ সুনির্দিষ্ট সময় পরপর পরিচালনা করে। প্রতি অপারেটর তার নেটওয়ার্কে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে লজিকগুলোকে বারবার প্রয়োগ করে অবৈধ কল টার্মিনেশনে ব্যবহৃত সিম/রীম শনাক্ত করে। এ এসআরপি পদ্ধতিতে সিম শনাক্ত করা হয়েছে প্রায় চার লাখ ৬৮ হাজার ৭৫১টি। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের রয়েছে দুই লাখ ৫৭ হাজার ১৪৯টি, রবি আজিয়াটার রয়েছে ৮৯ হাজার ৩৫৪টি সিম, বাংলালিংকের রয়েছে ৩০ হাজার ২৫২টি ও রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের আছে ৯১ হাজার ৯৯৬টি।
উল্লেখ্য, অবৈধ ভিওআইপি প্রযুক্তি ও স্থাপনা পরিচালনাকারীদের শনাক্ত করার লক্ষ্যে বিটিআরসি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। ইতোমধ্যে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিটিআরসির সম্পাদিত চুক্তির আওয়ায় পাঁচটি পর্যায়ে জিও-লোকেশন ফাইন্ডারের মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপি প্রযুক্তি ও স্থাপনা পরিচালনাকারীদের শনাক্ত করে। বর্তমানে ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে।
প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়াও নানা সোর্স হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিক্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বিভিন্ন অভিযান। এসব অভিযানে সিম ছাড়াও বিপুল পরিমাণ চ্যানেল বক্স, গেটওয়ে, সার্ভার ও অসত্য/ত্রুটিপূর্ণ/ভুল তথ্য দিয়ে নিবন্ধিত সিম, কল টার্মিনেশনে ব্যবহƒত সফটওয়্যারসহ কম্পিউটার এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের জানায়, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার ফলে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে অবৈধ ভিওআইপি একেবারে বন্ধ না করা গেলেও তা বহুলাংশে কমিয়ে আসা অসম্ভব কিছু নয়। এক্ষেত্রে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো যথাযথ নীতিমালা মেনে যাচাই-বাছাই করে সিম বিক্রি করলে নতুন করে এটি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
বিটিআরসি জানায়, গ্রাহকদের সিম সুরক্ষার জন্য মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে নির্দেশনা দেয়া আছে। আর অবৈধ সিমের জন্য জরিমানার বিধানও রয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী যে কোনো অপারেটরের প্রতিটি অবৈধ সিমের জন্য ৫০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা হচ্ছে।