ধারাবাহিকতা চান বিনিয়োগকারীরা

এক বছর পর ডিএসইতে লেনদেন ছাড়াল ৭০০ কোটি টাকা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: টানা পতনের পর সম্প্রতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। মূলত তারল্য সংকট কাটাতে সরকারি অর্থ ছাড় করার ঘোষণায় ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে সূচক। ফলে বেড়েছে লেনদেনও। গতকাল সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ৭০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। প্রায় এক বছর পর লেনদেন বাড়ল। যদিও এতে উচ্ছ্বসিত নন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা বাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করেন।

ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের বিষয়ে চলতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারের পরপরই এ উত্থান শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বড় উত্থানে শেষ হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আজকের চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল। ওইদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৮৯১ কোটি টাকার। এরপর আর লেনদেন ৭০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেনি।

এদিকে গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৬৫ পয়েন্টে। বেড়েছে অন্য সূচকগুলো। যার জের ধরে এক দিনের ব্যবধানে বাজার মূলধনও বেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বিনিয়োগকারীরা জানান, এই উত্থানে উচ্ছ্বসিত নন তারা। তারা বলেন, ‘আমরা চাই বাজারের দীর্ঘমেয়াদি ধারাবাহিকতা। হঠাৎ দু-চারদিন বাজার ভালো থাকল আবার অস্বাভাবিক পতন নেমে এলোÑএমন পুঁজিবাজার আমরা চাই না।’ তারা বলেন, গত বছর বেশিরভাগ সময়ই ডিএসইতে লেনদেন ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে ঘুরপাক খায়। কালেভদ্রে দু-একদিন লেনদেন এর বেশি হলেও তা স্থায়ী হয়নি, যা স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয়।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছর সর্বমোট ১২ কার্যদিবস ডিএসইতে এক হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি ডিএসইতে লেনদেন হতে দেখা যায় এক হাজার ২৪ কোটি টাকা। গত বছর নির্বাচনের পর কিছুটা চাঙা হয় বাজার, তখন কয়েকদিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতে দেখা যায়। কিন্তু এই পরিস্থিতি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর আবারও পতনের ধারায় ফিরে যায় পুঁজিবাজার। কমে যায় তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকের পাশাপাশি বাজার মূলধনও আশঙ্কাজনকহারে কমে যায়। ফলে লেনদেনও তলানিতে নেমে যায়।

আলাপকালে বাজারসংশ্লিষ্ট জানান, ডিএসইতে গড়ে প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হওয়া উচিত। কিন্তু বাজার ঘুরে দাঁড়ালেও হাজার কোটির টাকার ওপরে লেনদেন চোখে পড়ে না। তাদের মতে, ডিএসইতে এখন যে পরিমাণ প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে, তাতে এক হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা লেনদেন খুবই স্বাভাবিক।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তারা বলেন, ‘পুঁজিবাজারে লেনদেন হ্রাস-বৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু লেনদেন হতে হবে সন্তোষজনক। কিন্তু এ বাজারে যে লেনদেন হচ্ছে তা মোটেও সন্তোষজনক নয়। এটা দেখে বোঝা যায়, বাজারে তারল্য সংকট চলছে। এটা দূর করতে না পারলে বাজার পরিস্থিতি ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেন তারা। তবে কেউ কেউ বাজারের এ পরিস্থিতির কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।’

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক বাজার পতনের কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।’ বাজারে তারল্য সংকট রয়েছে কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে না থাকলে এই সমস্যা দেখা দেয়। তবে আমি বলব, বিনিয়োগকারীদের হতাশা থেকেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। লেনদেন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। বর্তমানে তারাও বাজার থেকে দূরে রয়েছে। যে কারণে এমন হয়েছে বাজার পরিস্থিতি।’

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজার উত্থান-পতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচা তেমন ভূমিকা রাখে না। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। তারা শেয়ার কেনাবেচা করলেই শুধু বাজারের সার্বিক চেহারা বদলে যায়। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি চলছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০