শেয়ার বিজ ডেস্ক: এক বছরেরও বেশি সময় কার্যত ‘লোডশেডিংয়ে’ থাকার পর অবশেষে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বভাবিক হয়েছে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায়। দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে সেখানে। তবে গ্রাহকদেরকে বিদ্যুতের জন্য চড়া দাম দিতে হচ্ছে। খবর: টাইমস অব ইন্ডিয়া, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
আগের দিন বুধবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের দপ্তরের গণমাধ্যম শাখা থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব গ্রাহক নিয়মিত বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করেন, তারা বৃহস্পতিবার থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ভোগ করবেন।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ কোম্পানি সিলন ইলেকট্রিসিটি বোর্ড ও সিলন পেট্রোলিয়াম করপোরেশন জানিয়েছে, এখন থেকে আর আগের মতো দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি জনগণকে পোহাতে হবে না। তবে বিদ্যুতের দাম অত্যন্ত চড়া। গত বছর আগস্টে বিদ্যুতের দাম ৭০ শতাংশ বাড়িয়েছিল শ্রীলঙ্কার সরকার। চলতি বছরের শুরুর দিকে এ দাম আরও ৬৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানী কলম্বোতে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা বিজয়শিখরা বলেন, আইএমএফের পরামর্শ মেনে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয়েছে সরকারকে। গত বছরের জানিুয়ারি থেকে দেশটিতে প্রতিদিন প্রায় ১৪ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে।
করোনা মহামারি, ত্রুটিপূর্ণ কর ব্যবস্থা, অপব্যয় ও দুর্নীতির কারণে ২০২১ সালের শুরু থেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক চাপে আছে শ্রীলঙ্কা। একটি দেশের ন্যূনতম অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো ডলারের মজুত থাকতে হয়, সেখানে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের রিজার্ভ বলতে প্রায় কিছুই নেই। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এই প্রথম এত কঠিন অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপদেশটি।
দেশের অর্থনীতিকে ফের দাঁড় করানোর জন্য আইএমএফের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ২৯০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কার সরকার। এই ঋণ না পেলে ঘুরে দাঁড়ানো কার্যত অসম্ভব হবে দেশটির জন্য। কিন্তু ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে কিছু শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। সেসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত হলো বিদ্যুতের ওপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার। কারণ আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে ২৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। তবে দেশটির ৫১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ রয়েছে। এ অবস্থায় আইএমএফ কিংবা বিশ্বব্যাংক ছাড়া বড় কোনো দাতা গোষ্ঠী পাওয়া যাবে না। ফলে ঋণ নিতে হলে আইএমএফের কথা মেনে কাজ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কাঞ্চনা বিজয়শিখরা বলেন, ‘আইএমএফের ঋণ নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যুতের ওপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা জরুরি ছিল। এমনিতেও অবশ্য ভর্তুকি দেয়া সম্ভব হতো না, কারণ সরকারি তহবিলের এখন যে অবস্থা, তাতে এখন ভর্তুকি দেয়াও আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। তবে আমরা আশা করছি এই অবস্থা খুব বেশিদিন থাকবে না। অর্থনীতি মোটামুটি ঘুরে দাঁড়ালেই ধীরে ধীরে সহনশীল পর্যায়ে নেমে আসবে বিদ্যুতের দাম।’
প্রসঙ্গত, অর্থনৈতিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কার জনগণ দিশাহারে হয়ে গত বছরের এপ্রিল থেকে টানা বিক্ষোভ করে আসছে। একপর্যায়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল করে নেয় বিক্ষোভকারীরা। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট দেশত্যাগে বাধ্য হন।