এটিএম সেলিম সরোয়ার, জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার হরেন্দা গ্রামের রেহেনা তার সংসার ভাগাভাগির সময় শাশুড়ির কাছ থেকে একটি ভেড়া উপহার পান, যার বরকতে তার খামারে এখন শতাধিক ভেড়া রয়েছে। তবে এর আগে তিনি অনেক ভেড়া বিক্রি করেছেন। সততা, আত্মবিশ্বাস ও শ্রম দিয়ে যেমন কোনো পুরুষ তার জীবনের চিত্র বদলাতে পারেন, তেমনি একজন নারীও এমনই কৌশলে সংসারের ভাগ্য বদলাতে পারেন। এমনই উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন রেহেনা।
অল্পদিনে তার জীবনে সফলতা আসার বিষয়ে তিনি জানান, অল্প বয়সে একই উপজেলার হরেন্দা গ্রামের আব্দুর রহিমের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তখন তার স্বামী প্যাডেলচালিত ভ্যান চালাতেন। পাঁচ শতকের ওপর পুরোনো ভাঙা একটি বাড়ি ছিল শ্বশুরের। সেখানেই বসবাস করতেন সবাই। রহিমের ভ্যান চালানোর টাকা দিয়ে খুব কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলত। এরই মাঝে তিন বছরের মধ্যে সংসারে এলো রাশেদ ও আশিক নামে দুই পুত্রসন্তান। তখন আরও খরচ বেড়ে যায় তাদের সংসারে। এসময় শ্বশুর-শাশুড়ির সংসার থেকে আলাদা হতে হয় তাদের। আলাদা হওয়ার সময় শাশুড়ির কাছ থেকে তারা ভাগ পান একটি ভেড়ার বাচ্চা। রহিমা তার সন্তানদের পাশাপাশি সেই ভেড়াকেও নিজের সন্তানের মতো যতœ করে লালনপালন করতে থাকেন। লালনপালনের মধ্যে ভেড়াটি বড় হয়ে যায় এবং প্রথমবার দুটি বাচ্চা জš§ দেয়। আর এ দুটি বাচ্চা জš§ দেয়ার পর থেকেই তার খামারে বাড়তে থাকে সংখ্যা। এভাবেই প্রতি বছর ভেড়া বাড়তেই থাকে। সেই থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি রেহেনাকে।
কয়েক বছর ধরে একটি ভেড়া তার সংসারের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। এ পর্যন্ত ভেড়া বিক্রি করে রেহেনা তার বড় ছেলে রাশেদ হোসেনকে একটি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে আশিককে স্থানীয় হাকিমপুর কৈজড়ি বিএনআর উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করাচ্ছেন। এছাড়া তিনি প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে তার স্বামীর বাড়ির সঙ্গে লাগানো আরও পাঁচ শতক জায়গা এবং দেড় লাখ টাকা দিয়ে দুটি গাভী কেনেন। বর্তমানে তার খামারে ছোট-বড় মিলে প্রায় ১০০টি ভেড়া আছে।
রেহেনার স্বামী আব্দুর রহিম জানান, একসময় টাকাপয়সার অভাবে তিনি সংসার চালাতে পারতেন না, অভাব-অনটন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। তিনি আরও জানান, তার স্ত্রীর জন্য সংসারে অনেক উন্নতি হয়েছে। আগামীতে তিনি ছেলেদের নিয়ে গরুর খামার করবেন।
স্কুলপড়–য়া ছেলে আশিক বলে, বড় ভাই ঢাকায় একটি কলেজে লেখাপড়া করছে। আর আমি স্থানীয় স্কুলে আছি। স্কুলে যাওয়ার আগে এবং স্কুল থেকে এসে আমি ভেড়াগুলোকে ঘাস খাওয়াতে মাঠে নিয়ে আসি। যতটুকু সময় পাই তা আমার মায়ের সঙ্গে ভেড়াগুলোর জন্য দিই। সব সময় ভেড়াগুলোর পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন আমার মা।
এ বিষয়ে উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নিয়ায কাজমীর বলেন, রেহেনা বেগম ভেড়া পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে এ উপজেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাকে দেখে অন্যরা ভেড়া পালন করবেন বলে আমি আশা করছি। আমি তাকে সরকারিভাবে ভেড়া পালনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব, যাতে করে ভেড়া পালন করা তার জন্য সহজ হয়।