রোহান রাজিব: আমদানি ব্যয়ের কারণে চাপ পড়েছে রিজার্ভে। এ চাপ কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে অর্থনীতির সংকটপূর্ণ মুহূর্তে। আমদানি ব্যয় সংকোচন নীতিতে এক মাসের ব্যবধানে ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি কমেছে ১১৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত এপ্রিল থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন গভর্নর যোগ দেয়ার পর তা অব্যাহত রাখার সঙ্গে নতুন পদক্ষেপ হিসেবে ৩০ লাখ ডলারের এলসি খোলার তথ্য পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ফলে জুলাইয়ে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ কমেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাইয়ে এলসি নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৬৫৮ কোটি ডলারের, যা জুনের তুলনায় ১১৭ কোটি ডলার কম। জুনে নিষ্পত্তি করা হয়েছিল ৭৭৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।
অন্যদিকে জুলাইয়ে ৫৫৫ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা জুনে ছিল ৭৯৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ জুন থেকে জুলাই এলসি খোলা কমেছে ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করেছে। নতুন গভর্নর যোগ দেয়ার পর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ৩০ লাখ ডলারের ওপরে আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অনিয়ম পেলে তা আটকে দিচ্ছি। এছাড়া বিলাসী পণ্যের এলসি মার্জিন শতভাগ করা হয়েছে। ফলে জুনের তুলনায় জুলাইয়ে এলসি নিষ্পত্তি কমে এসেছে। এটা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আরও কমে আসবে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৮৫ কোটি ডলারের, ফেব্রুয়ারিতে ৬৫৫ কোটি, মার্চে ৭৬৭ কোটি, এপ্রিলে ৬৯৩ কোটি, মে মাসে ৭২৫ কোটি, জুনে ৭৭৫ কোটি ও জুলাইতে ৬৫৮ কোটি ডলারের। অন্যদিকে জানুয়ারিতে এলসি খোলা হয়েছে ৮৬৫ কোটি ডলারের, ফেব্রুয়ারিতে ৭২৩ কোটি, মার্চে ৯৮৭ কোটি, এপ্রিলে ৮৬১ কোটি, মে মাসে ৭৪৪ কোটি, জুনে ৭৯৬ কোটি ও জুলাইয়ে ৫৫৫ কোটি ডলারের।
এতে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। কিন্তু মার্চে বেড়েছে ১২ দশমিক ২ শতাংশ, এপ্রিলে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে, মে মাসে আবার কমেছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ, জুনে বেড়েছে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ, আর জুলাইয়ে কমেছে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।
আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ কমায় তা সামনের মাসগুলোয় ডলার সংকটে কিছুটা স্বস্তি আনবে বলে মনে করছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা।
কভিড-১৯ মহামারিতে সংক্রমণ কমে আসতে থাকলে অর্থনীতি গতিশীল হওয়া শুরু করলে ওই সময় থেকে দেশে আমদানি বাড়তে থাকে। গত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে পণ্য আমদানিতে এলসির বিপরীতে মোট পরিশোধ করতে হয়েছে আট হাজার ২৫০ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ৩৬ শতাংশ বেশি। এ সময় রপ্তানি আয় ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে চার হাজার ৯২৫ কোটি ডলার। রপ্তানি আয় অনেক বাড়লেও আমদানির সঙ্গে ব্যবধান বেড়েছে। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে তিন হাজার ৩২৫ কোটি ডলার। এছাড়া আমদানি ব্যয় কমার তথ্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিলেও ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। আকুর মে-জুন মেয়াদের ১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের আকুর দেনা পরিশোধ করা হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের বিল শোধ করা হয় ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।